দিল্লির দাবি: ভারতীয় কাঁচামালে তৈরি তুর্কি ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছে ভারতের বিরুদ্ধেই!

‘অপারেশন সিঁদুর’ ঘিরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান সংঘাত-টানাপড়েনের আবহে নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে তুরস্ক। নয়াদিল্লির অভিযোগ, ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামাল ব্যবহার করেই তুরস্ক যুদ্ধড্রোন তৈরি করেছে, যা পরে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভারতের বিরুদ্ধেই ব্যবহারের জন্য। এই ঘটনায় আঙ্কারার ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছে দিল্লি।

তুরস্কের তৈরি একটি ড্রোন

নয়াদিল্লি ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, তুরস্ক ভারত থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি, টেলিকম যন্ত্র, ভিডিও ট্রান্সমিটার ও অ্যান্টেনা আমদানি করে। এই উপকরণগুলো ড্রোন তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত। এমনকি, তুর্কি সংস্থাগুলো ভারত থেকে প্রপেলার, মোটর, স্পিড কন্ট্রোল মডিউল, ক্যামেরা ও ফ্রেমও আমদানি করে থাকে, যা অত্যাধুনিক সামরিক ড্রোন তৈরির প্রধান উপাদান। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পায়নি ভারত, তবে দক্ষিণ এশীয় দেশটির এ সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।

ভারতের সামরিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে চলমান সংঘাতে তুরস্ক পাকিস্তানকে দুটি শক্তিশালী ড্রোন সরবরাহ করেছে – ‘সোঙ্গার’ ও ‘বায়রাক্তার টিবি-২’। এর মধ্যে সোয়ার্ম ক্যাটাগরির ড্রোন ‘সোঙ্গার’ মূলত নজরদারিমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। সংঘাতের ঠিক আগে ইসলামাবাদকে ৩০০ থেকে ৪০০টি ‘সোঙ্গার’ ড্রোন সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান এই ড্রোনগুলোর সাহায্যে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩৬টি হামলার পরিকল্পনা করেছিল, যা নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যর্থ করে দেয় ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা সংস্থা ‘জাইরন ডায়নামিক্স’ ভারতে বিনিয়োগ করেছিল। তবে মাত্র তিন বছরের মাথায় তুরস্ক ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বরং সেই সময় থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক দৃশ্যত ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে।

ভারতের সঙ্গে সংঘাত শুরুর প্রাক্কালে তুরস্কের একটি যুদ্ধজাহাজ করাচি বন্দরে ভেড়ে এবং ইসলামাবাদে ছয়টি সি-১৩০ সামরিক পরিবহন বিমান অবতরণ করে। তুর্কি প্রশাসনের পক্ষ থেকে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন ও যৌথ মহড়ার কথা বলা হলেও ভারত তা মানতে নারাজ।

এদিকে, ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে তুরস্কের সমর্থন এবং ড্রোনসহ অন্যান্য সহযোগিতার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে দিল্লি সরকার ও দেশটির জনগণ। তারা এখন তুরস্ক বয়কটের পথে হাঁটছে। এর মধ্যে রয়েছে তুরস্কগামী পর্যটন বুকিং বাতিল, ভারত-তুরস্কের যৌথ কয়েকটি প্রকল্প স্থগিত এবং তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় চুক্তি স্থগিতকরণ।

সূত্র: এবিপি