হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ: আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা

বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন থেকে আর নতুন করে কোনো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এমনকি, বর্তমানে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও তাদের ভিসা টিকিয়ে রাখতে হলে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হতে হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২২ মে) এই আকস্মিক ঘোষণা আসে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষামহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। খবর আল জাজিরার।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যখ্যা করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘হার্ভার্ড তার ক্যাম্পাসে সহিংসতা, ইহুদিবিদ্বেষ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমন্বয় সাধন করায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জবাবদিহি করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা কোনো অধিকার নয়, বরং একটি বিশেষ সুবিধা। হার্ভার্ডের কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা তা নেয়নি।’

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের অধীনস্থ ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ এর সনদ বাতিলের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে হার্ভার্ডের পক্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী ধরে রাখা বা নতুন করে ভর্তি করার আর কোনো সুযোগ থাকছে না।

এদিকে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা ১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের হার্ভার্ডে স্বাগত জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশকে অমূল্যভাবে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত আমাদের সেই প্রচেষ্টাকে গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্র্য নীতি এবং সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের প্রতি তাদের নমনীয় অবস্থান এই কঠোর সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও তিন দফায় হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ফেডারেল তহবিল ও অনুদান থেকে ২.৬ বিলিয়ন ডলার কর্তন করেছিল। হার্ভার্ড বর্তমানে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা পরিচালনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভকে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে, যদিও বিক্ষোভকারীরা এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মতো আরও কয়েকটি খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ এনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে সাত হাজার ৪১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’-এর অধীনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনুমোদিত ছিল। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানিয়েছে, ফেডারেল আইন অনুযায়ী তারা যেকোনো সময় এই অনুমোদন পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা রাখে। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।