খাদ্য ভর্তুকি ৩১% বাড়িয়ে ৯,৫০০ কোটি টাকা করছে সরকার

আসন্ন অর্থবছরে দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার খাদ্য ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। এই খাতে বরাদ্দ ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৯,৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে খাদ্য ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৭,২০০ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ৮,০৫৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

প্রতীকী ছবি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলত চাল আমদানি বৃদ্ধি এবং খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের ফলেই এই বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে। সরকার খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) এবং ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মতো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে।

আগামী অর্থবছরে এসব কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বর্তমান ৫০ লাখ পরিবার থেকে বেড়ে ৫৫ লাখে উন্নীত হতে পারে। এছাড়া, প্রতিটি পরিবার এখনকার পাঁচ মাসের পরিবর্তে ছয় মাস ধরে প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল পাবে। এই কর্মসূচিগুলো বর্তমানে আট বিভাগের ২৫৬টি উপজেলায় বিস্তৃত, যেখানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর জরিপে চিহ্নিত সবচেয়ে দরিদ্র এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

যদিও আগামী বছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমার আশা করছে সরকার, কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে নিত্যপণ্যের চড়া দাম সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে।

এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ অনুযায়ী, চলতি বছর জাতীয় দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২.৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে (দৈনিক ২.১৫ ডলার আয়) চরম দারিদ্র্যের হার ৯.৩ শতাংশে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা আরও ৩০ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে যেখানে চরম দারিদ্র্য ছিল ৫.৫ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৭.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আয়বৈষম্য পরিমাপক গিনি সূচকও ৩৫.৫ থেকে বেড়ে ৩৬.১ হতে পারে, যা সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। বিশ্বব্যাংক এই পরিস্থিতির জন্য অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান হ্রাসকে দায়ী করেছে।

চলতি অর্থবছরে টিসিবির মাধ্যমে সরকার চাল ছাড়াও ডিম, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল এবং সবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করেছে। ২০২৫ অর্থবছরের জন্য কর্তৃপক্ষ ৩০ লাখ টন চাল ও গম বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৫ মে পর্যন্ত ২৬.৮৫ লাখ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ২৭.৯২ লাখ টনের চেয়ে কিছুটা কম। তবে, চলতি অর্থবছরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং ওএমএসের মাধ্যমে ২১.৩১ লাখ টন খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে, যা আগের বছরের (১৯.৯ লাখ টন) চেয়ে বেশি।

অন্যদিকে, নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে গ্রামীণ এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির (কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডি) আওতায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম কিছুটা ধীর হয়ে পড়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চলতি বছরের ১৫ মে পর্যন্ত এসব কর্মসূচিতে মোট ৫.৫৫ লাখ টন খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭.৫ লাখ টন।

এছাড়াও, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরকারকে চাল আমদানিও বাড়াতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৭.০৯ লাখ টন চালসহ মোট ১১.৫ লাখ টন খাদ্য আমদানি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে চাল আমদানির পরিমাণ ৯ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে।

ডেইলি স্টার অবলম্বনে