প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং: ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ফার্স্টপোস্ট’-এ ‘বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত’ শিরোনামে প্রকাশিত উস্কানিমূলক প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। ২১শ মে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাকিস্তানের আইএসআই, ইসলামপন্থী গোষ্ঠী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেট’-এর মদদপুষ্ট একজন স্বৈরাচারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে প্রেস উইং।

‘ফার্স্টপোস্ট’-এ প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট

প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূস ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন বিলম্বিত করছেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং চীন ও পাকিস্তানের সহায়তায় গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করে ভারতের আঞ্চলিক প্রভাববলয়কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই সকল অভিযোগকে কাল্পনিক ও বাস্তবতাবিবর্জিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ক্ষমতা গ্রহণ ও নির্বাচন: প্রেস উইং স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। ২০২৪ সালের আগস্টে নজিরবিহীন ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার প্রতিনিধি, প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ, সুশীল সমাজ এবং রাষ্ট্রপতির সম্মিলিত সমর্থনে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। তার ব্যক্তিগত কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নই’ এবং তার একমাত্র লক্ষ্য দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রমের বাস্তবসম্মত অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে রূপরেখা অন্তর্বর্তী সরকার দিয়েছে, তা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কোনো অপচেষ্টা নয়, বরং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য প্রস্তুতি।

বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ: বিদেশি শক্তির মদদে সরকার পরিবর্তনের অভিযোগও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ব্যাপক গণঅসন্তোষ এবং সরকারের দমননীতির ফলশ্রুতিতে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনার জেরেই শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিদেশি হস্তক্ষেপের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা: ড. ইউনূসকে জামায়াতে ইসলামীর ক্রীড়নক হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টাও বিভ্রান্তিকর। অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় দলটির কোনো সদস্য নেই এবং দলটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আদালতের একটি আইনি সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে সরকারের কোনো আদর্শিক সংশ্লিষ্টতা নেই। ড. ইউনূসের সরকার ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আইএমএফসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অভ্যুত্থান সংক্রান্ত সকল গুজব নাকচ করে দিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়ায় তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কোনো অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরও উল্লেখ করেছে, ফার্স্টপোস্টের এই প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতীয় কট্টরপন্থী গণমাধ্যমগুলোর একটি বিশেষ প্রচারণার অংশ। এই গণমাধ্যমগুলো ভারতীয় কট্টরপন্থীদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শেখ হাসিনার পতনের পর গঠিত বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ভিত্তিহীন ও বিদ্বেষপূর্ণ প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনটি সেই অপপ্রচারেরই নগ্ন প্রতিফলন এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার একটি অপচেষ্টা। প্রেস উইং এ ধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।