ইরাকে তীব্র পানি সংকট: মজুদ ৮০ বছরের সর্বনিম্ন, হুমকির মুখে কৃষি

শুষ্ক বর্ষা মৌসুম, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উজানে বাঁধ নির্মাণের ফলে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ায় ইরাকের পানির মজুদ গত ৮০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশ বর্তমানে এক গুরুতর পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি, যা কৃষি ও জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। খবর আরব নিউজের।

ইরাকের নদীগুলোতে পানি আগের চেয়ে অনেক কম

ইরাকি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্কের তৈরি করা উজানের বাঁধের কারণে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এই নদী দুটি হাজার বছর ধরে ইরাকের কৃষি ও জীবনধারার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে দেশটি স্বাভাবিক প্রবাহের মাত্র ৪০ শতাংশেরও কম পানি পাচ্ছে।

ইরাকের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালেদ শামাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আমাদের কমপক্ষে ১৮ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি মজুদ থাকা উচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমাদের কৌশলগত মজুদ অনেক ভালো ছিল, যা এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ। বিগত ৮০ বছরে এত কম মজুদ আমরা আর দেখিনি।’

শামালের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এই সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ বছর শীতকালে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং তুষার গলনের পরিমাণ হ্রাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

জাতিসংঘ অনেক আগেই ইরাককে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি দেশের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পানি সংকটের প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ, ইরাকের বহু কৃষক তাদের জমি চাষাবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কৃষিকাজের পরিমাণও ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। শামাল জানান, ‘ইরাকে কৃষি পরিকল্পনা সবসময় পানির প্রাপ্যতার ওপর নির্ভরশীল। এ বছর সরকার ১৫ লাখ ইরাকি দুনাম (৩.৭৫ লাখ হেক্টর) জমিতে কৃষিকাজ চালু রাখার পরিকল্পনা করছে, যা মূলত সবুজ ও উৎপাদনশীল অঞ্চল সংরক্ষণের অংশ। অথচ গত বছর সরকার কৃষকদের ২৫ লাখ দুনাম জমিতে ভুট্টা, ধান এবং ফলের বাগান চাষের অনুমতি দিয়েছিল।’

পানি সংকট নিয়ে তুরস্ক ও ইরাকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তুরস্ক একাধিকবার ইরাককে আরও কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

তবে আশার কথা, ২০২৪ সালে দুই দেশ একটি ১০ বছরের ‘ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি’ সই করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যৌথ বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। এই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন ইরাকের পানি সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।