সিএনএনের বিশ্লেষণ: ট্রাম্পকে নিয়ে খেলছেন পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কার্যত সুবিধামতো ব্যবহার করছেন বলে এক বিশ্লেষণে জানিয়েছে সিএনএন। ট্রাম্পকে একসময় ‘গুরু’ হিসেবে তুলে ধরা হলেও, যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে তার দাবিকে এখন আর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না রুশ নেতা। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া ট্রাম্পকে এক ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবকে ক্রেমলিন ক্রমেই গুরুত্বহীন করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে ট্রাম্পের করা পোস্টগুলো এখন অনেকের কাছে হাসি-ঠাট্টার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধবিরতিতে অগ্রগতির ব্যাপারে তার দেওয়া স্ট্যাটাসগুলো কার্যত অর্থহীন হয়ে পড়েছে। এই কারণেই ট্রাম্প পুতিনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ‘পাগল’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

তবে ট্রাম্প এখনও মনে করেন, ক্রেমলিন ইচ্ছাকৃতভাবেই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাচ্ছে না। এই অবস্থান থেকে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথে হাঁটতে পারেন। এমনকি, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি অনুসরণ করে ট্রাম্প নতুন করে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

কিন্তু ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে বড় ধরনের অস্ত্র সরবরাহের পথে যান, তবে তা তার পূর্ববর্তী অবস্থানের পরিপন্থী হবে। কারণ, বাইডেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিরোধিতা করেছিলেন। এমনটা ঘটলে, ট্রাম্পকে প্রকারান্তরে বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে মেনে নিতে হবে।

ট্রাম্পের হাতে আরও একটি বিকল্প পথ খোলা রয়েছে, যা নিয়ে ইউক্রেন এবং ইউরোপ উভয়েই শঙ্কিত। সেটি হলো, ট্রাম্প উভয় পক্ষকেই পরিত্যাগ করার ঘোষণা দিতে পারেন। এমনটি ঘটলে রাশিয়া আরও ভূখণ্ড দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারে, যা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

এদিকে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল একটি নতুন বিল উত্থাপন করেছেন, যা রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করে।

এই নিষেধাজ্ঞা চীনের মতো মার্কিন প্রতিপক্ষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অন্যদিকে, ভারতের মতো মার্কিন মিত্র দেশের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, কারণ ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কেনা অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, বিলটি পাস হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প কিয়েভকে আরও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারেন, যা রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সহায়ক হবে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ইউক্রেনে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম টেলর সোমবার সিএনএনকে বলেছেন, "ট্রাম্পের হুমকি-ধামকি কোনো কাজেই আসছে না। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য সমর্থন আরও বাড়ানো উচিত।"

সূত্র: সিএনএন