বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক হাব মহেশখালী-মাতারবাড়ি: জাইকার দ্বারস্থ ড. ইউনূস

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগকে (এমআইডিআই) একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) শক্তিশালী সমর্থন চেয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাইকা প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকো।

টোকিও’র ইম্পেরিয়াল হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘৩০তম নিক্কেই ফোরাম: এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সম্মেলনের এক ফাঁকে জাইকার প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকোর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই এমআইডিআই এলাকাই হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রবন্দর, মহাসড়ক এবং রেলপথ নির্মাণ করছি। এর মাধ্যমে এই অঞ্চল নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে।’

উল্লেখ্য, জাইকাই প্রথম মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে, যার লক্ষ্য পুরো এমআইডিআই অঞ্চলকে বন্দর, লজিস্টিকস, মৎস্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রিক একটি কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘এই অঞ্চলে একটি মেগাসিটি গড়ে তোলার স্বপ্ন আমাদের রয়েছে।’ তিনি জানান, যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে বিমানবন্দরগুলোরও উন্নয়ন করা হচ্ছে।

ড. তানাকা এমআইডিআই উন্নয়নে জাইকার প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় নিশ্চিত করেন, তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর জোর দেন।

এর উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস এমআইডিআই প্রকল্পের তত্ত্বাবধান এবং জাইকাসহ অন্যান্য সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, এমআইডিআই এলাকায় একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা স্থাপন করতে পারবেন।

পাশাপাশি, এই অঞ্চলে একটি বিশেষায়িত মৎস্য অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে, যেখানে বড় বড় মাছ ধরার জাহাজ কাজ করতে পারবে।

অধ্যাপক ইউনূস ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মাছ ধরার জাহাজ আমাদের জলসীমা ব্যবহার করছে, কারণ গভীর সমুদ্রে যাওয়ার মতো বড় ট্রলার আমাদের নেই। আমরা সক্ষমতা বাড়াতে পারলে সেই মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি এবং দেশের বাজারেও সরবরাহ করতে পারব।’

ড. তানাকা মন্তব্য করেন, সম্ভবত তিনিই প্রথম কোনো বাংলাদেশি নেতার কাছ থেকে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের এমন উদ্যোগের কথা শুনলেন।

বৈঠকে উভয় নেতা জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম, গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস জানান, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে তিনি তার আগের পেশায় ফিরে যাবেন।

এছাড়াও, বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও কথা হয়। প্রধান উপদেষ্টা এই সংকটে মানবিক সহায়তা বাড়াতে জাইকার সহযোগিতা চান। ড. তানাকা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগে জাইকার অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখান।