ইসরায়েলকে ‘উত্তপ্ত গ্রীষ্মের’ হুমকি

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলার পরও গাজা উপত্যকার প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি সানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েলের চার দফা বিমান হামলার পর তারা ইসরায়েলকে ‘উত্তপ্ত গ্রীষ্মের’ হুমকি দিয়েছে। তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সির খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

সানা বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি বিমান

হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরা টিভি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বিমান হামলায় সানা বিমানবন্দরের রানওয়ে এবং ইয়েমেনিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হুথি সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান মাহদি আল-মাশাত হামলাস্থল পরিদর্শন শেষে হুথি-সমর্থিত সাবা নিউজ এজেন্সিকে বলেন, ‘এই অপরাধমূলক আগ্রাসন আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রতিশোধের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’

তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘গাজায় হামলা ও অবরোধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তোমরা (ইসরায়েল) আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে জায়নবাদীদের রক্ষা করতে পারবে না।’ আল-মাশাত ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলোকেও সতর্ক করে বলেছেন, তাদের মনে রাখা উচিত যে তারা কখনোই নিরাপদ নয়।

উল্লেখ্য, গত ৪ মে হুথিদের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছিল, যার ফলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ইসরায়েলে তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়। আল-মাশাত আরও বলেন, ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এবং ইসরায়েলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে থেকেও নিরাপদ নয়। তিনি সানা বিমানবন্দরে ইসরায়েলি হামলাকে ‘আমাদের আঘাতে তাদের (ইসরায়েলের) ব্যথা পাওয়ার প্রমাণ’ হিসেবে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দেন, ‘জায়নবাদীদের জন্য এক উত্তপ্ত গ্রীষ্ম অপেক্ষা করছে।’

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত বুধবারের (২৮ মে) হামলাটি ছিল ইয়েমেনে ইসরায়েলের চালানো দশম হামলা। এর আগেও ইয়েমেনের সিমেন্ট কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সমুদ্রবন্দরগুলো ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। তবে, ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এসব হামলা হুথিদের কার্যক্রম দমনে ব্যর্থ হওয়ায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সমালোচনা বাড়ছে।

মঙ্গলবার হুথিরা দাবি করে, চলতি মে মাসের শুরু থেকে তারা ইসরায়েলে ২২টি সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এর ফলে মে মাসটি তেল আবিবের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক মাস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত মার্চে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে হুথিরা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে হুথিরা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর এবং আরব সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যেটিকে তারা গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।