জাতীয় বাজেট পেশ আজ: বাড়বে-কমবে যেসব পণ্যের দাম

আজ সোমবার নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা।

নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হচ্ছে আজ

দীর্ঘ ১৬ বছরের মাথায় এবার জাতীয় সংসদের বাইরে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব পাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানো। এতে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) বাড়ানো হলেও কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। আবার কিছু পণ্যে আমদানিতে উৎসে কর কমানোয় দাম কমে আসতে পারে।

দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের:

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে এই বাজেটে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে উৎসে কর রয়েছে ১ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, গম, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ভুট্টা, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যা মানুষের জন্য কিছুটা সুখবর।

এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার: বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদার ভিত্তিতে এলএনজি একটি জরুরি পণ্য। এবার বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হতে পারে। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময়ও একই ভ্যাট ও উৎসে কর দিতে হয়।

জ্বালানি তেলে শুল্ক কমছে: এবার বাজেটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে।

চামড়াশিল্পে শুল্ক ছাড়: চামড়াশিল্পের জন্য আমদানিকৃত কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব আসতে পারে এই বাজেটে।

ভূমি নিবন্ধনে কর কমছে: আসন্ন বাজেটে ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাঠার পরিবর্তে শতাংশে নিবন্ধন ফি ও কর নির্ধারণ হবে। ভূমি নিবন্ধনে অগ্রিম করও কিছুটা কমানো হতে পারে।

শুল্ক কমছে চিনি আমদানিতে: চিনির বাজারদর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে এই বাজেটে।

সয়াবিন মিল ও কাগজশিল্পে কাঁচামালে শুল্ক হ্রাস: দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠায় ও স্থানীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক হিসেবে সয়াবিন মিল কিংবা কাগজশিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামালে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব থাকছে এই বাজেটে।

সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট: সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব ছিল নোয়াবসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিতে ও দেশীয় গণমাধ্যমকে আরো সহায়তা দিতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব আসতে পারে।

বিদেশি জুস: জুস (নন-অ্যালকোহলিক) আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে এই বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

রড ও স্টিলে ভ্যাট বৃদ্ধি: দেশে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হচ্ছে রড। রাজস্ব বাড়াতে নতুন বাজেটে অগ্রিম আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে রড ও স্টিলে দাম বেড়ে যেতে পারে।

এসি-ফ্রিজে ভ্যাট বাড়ছে: ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বর্তমানে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত। তবে নতুন র্থবছরে তা ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ: বিদায়ী বাজেটে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত সব আমদানি, নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। নতুন অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক-ভ্যাট কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সিগারেট: চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক দুটিই বাড়ানো হয়েছিল। নতুন বাজেটে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। তবে সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে সিগারেটের।

দেশীয় মোবাইল ফোন: মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। উৎপাদনের ক্যাটাগরিভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বাজেটে। ফলে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

কসমেটিক্স পণ্যে খরচ বাড়ছে: নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত লিপস্টিক, লিপ লাইনার, আই লাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে।

ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্য: একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চা-কফি কাপ, প্লাস্টিক প্লেট ও বাটির মতো পণ্যে ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছবে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদেশি চকলেট: চকলেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। বর্তমানে চকলেটের শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ৪ ডলার। এটি বাড়িয়ে ১০ ডলার করা হচ্ছে। তাতে আমদানিকৃত চকলেটের দাম বাড়তে পারে।

বিদেশি খেলনা: স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। এতে বিদেশি খেলনার দাম বাড়তে পারে।