প্রথম ধাপে ৩৬ জেলার ৪,৫৫১ জুলাই যোদ্ধাকে স্বাস্থ্য কার্ড দিচ্ছে সরকার

সরকার জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে আহত হওয়া ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিশেষ স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে, দেশের ৩৬টি জেলার মোট ৪ হাজার ৫৫১ জন জুলাই যোদ্ধা এই স্বাস্থ্য কার্ড পাচ্ছেন। সরকার জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলার আহত যোদ্ধাদেরও এই কার্ডের আওতায় আনা হবে।

৫ আগস্টের ছবি

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে এই জুলাই যোদ্ধাদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কার্ড পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে, বিভিন্ন জেলার জন্য প্রস্তুতকৃত স্বাস্থ্য কার্ডগুলি সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।

গত রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি জারি করে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনকে একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। এরপর সেই প্রতিনিধির নাম, পদবি, মোবাইল নম্বর এবং স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠাতে হবে। এই মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমেই স্বাস্থ্য কার্ডগুলো গ্রহণ করে নিজ নিজ জেলার আহত যোদ্ধাদের কাছে সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রাথমিকভাবে যে ৩৬টি জেলার আহত জুলাই যোদ্ধারা স্বাস্থ্য কার্ড পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জেলা ও সংখ্যা হলো: কিশোরগঞ্জে ১১২ জন, নরসিংদীতে ৪৩০ জন, কুমিল্লায় ১০৮ জন, চট্টগ্রামে ১৬৮ জন, ফেনীতে ১০৬ জন, বরিশালে ৮২ জন, ঢাকায় ৩৭৭ জন, দিনাজপুরে ৬০ জন, সিলেটে ৮৬ জন, টাঙ্গাইলে ২৫৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৪৩ জন, গাইবান্ধায় ৩৯ জন, বগুড়ায় ২৯৬ জন, লক্ষ্মীপুরে ১৬৬ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭ জন, নীলফামারীতে ৩৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ২২১ জন, কুড়িগ্রামে ১৫ জন, গাজীপুরে ৩৭৫ জন, নোয়াখালীতে ১০১ জন, ঝিনাইদহে ২৭ জন, নাটোরে ৪ জন, নারায়ণগঞ্জে ১০০ জন, কুষ্টিয়ায় ৪৩২ জন, পিরোজপুরে ১৩ জন, জয়পুরহাটে ৬ জন, ময়মনসিংহে ১৭৯ জন, রংপুরে ১১২ জন, ভোলায় ৭৬ জন, চাঁদপুরে ১১৮ জন, যশোরে ১৩ জন, নওগাঁয় ৫ জন, মাদারীপুরে ৮১ জন এবং বরগুনায় ৯৫ জন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে আহত জুলাই যোদ্ধারা দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অথবা বিশেষ ছাড়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এই স্বাস্থ্য কার্ড তাদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতি রাষ্ট্রের একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিস্বরূপ।

এর আগে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের জন্য দেশব্যাপী সকল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। সেই সময় তিনি গণঅভ্যুত্থানের দুই যোদ্ধা – নরসিংদী ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী ইফাত হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইমুর হাতে প্রতীকী স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব বাসসকে জানিয়েছেন, এই হেলথ কার্ড থাকার অর্থ হলো, এক বছর বা দুই বছর পর, যেকোনো সময়ই দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে কার্ডধারীরা চিকিৎসা সেবা পাবেন। এই কার্ডের কার্যকারিতা সবসময় থাকবে।

সূত্র: বাসস