যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারা

সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান এবং ভাষণ প্রদানের জন্য নিউইয়র্ক সফর করবেন। মঙ্গলবার (৩ জুন) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলের এক প্রতিবেদনে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আহমেদ আল-শারা

এই সফরটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি চলতি বছরের মে মাসে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আল-শারা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় পর এটিই ছিল কোনো মার্কিন ও সিরিয়ার শীর্ষ নেতার মধ্যে প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সক্রিয় মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত রিয়াদের ওই বৈঠককে সিরিয়ার প্রতি মার্কিন নীতির একটি বড় পরিবর্তন এবং জাতিসংঘে আল-শারার আসন্ন উপস্থিতির ক্ষেত্রে মূল সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। রিয়াদের বৈঠকের আগেই ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার ওপর থেকে বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের একটি আকস্মিক ঘোষণা দিয়েছিল, যা তার নিজের উপদেষ্টাদেরও রীতিমতো অবাক করে দেয়।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আল-শারা এটিকে ‘ঐতিহাসিক ও সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সিরিয়ার জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করবে, তাদের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করবে এবং এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার ভিত্তি স্থাপন করবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তৎকালীন আসাদ সরকারের বিরোধীদের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই দীর্ঘস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাগুলো সিরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আল-শারা, যিনি পূর্বে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা ছিলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেকে একজন বাস্তববাদী ও জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার গ্রহণযোগ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন জাতিসংঘের ভাষণে আল-শারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সিরিয়াকে পুনরায় একীভূত করার এবং দেশটির পুনর্গঠনে সহায়তার আহ্বান জানাবেন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সমর্থন নির্ভর করবে দেশটির পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের ওপর, যার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকর সহযোগিতার বিষয়টি অন্যতম।

এটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম কোনো সিরিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন, যা এই সফরকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

সূত্র: দ্য নিউ আরব