গুম নিয়ে তদন্ত: ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

গুম সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন ওয়েবসাইট এবং বই আকারে প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ এসব ঘটনার চিত্র সবার সামনে তুলে ধরতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয়। ছবি: পিআইডি

বুধবার (৪ জুন) বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন দ্বিতীয় ইন্টেরিম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। কমিশনের প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে সদস্য নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিস প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঘটনাগুলো এতটাই ভয়াবহ যে আমাদের সমাজের ‘ভদ্রলোকেরা’ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকাটা মর্মান্তিক। আপনারা যা কিছু পেয়েছেন, তার ভিত্তিতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত। তিন বাই তিন ফুটের বন্দিশালায় দিনের পর দিন মানুষ আটকে থাকত — এ ধরনের নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের জানা প্রয়োজন।

কমিশনের এক সদস্য জানান, ঘটনাগুলোর ভয়াবহতায় অনেক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অনুশোচনায় ভুগছেন এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করছেন। দুজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে লিখিত চিঠিও দিয়েছেন, যা গণভবনে জমা রয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধানও এ চিঠির বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।

কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি যাচাই–বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সদস্যরা।

তারা আরও জানান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো ৩০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিশন প্রধান অনুরোধ জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যেন অন্তত ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিতে। এ জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে সাত বছর নয়, পাঁচ বছর নিখোঁজ থাকলে মৃত হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জরুরি করণীয়গুলো চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে তা নির্ধারণ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আপনারা ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে যেভাবে কাজ করছেন তা এদেশের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতের মানবাধিকারকর্মীদের জন্যও এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।