গাজায় হামাসবিরোধী গোষ্ঠীকে সহায়তা দিচ্ছে ইসরায়েল, স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু

গাজায় হামাসবিরোধী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ইসরায়েল সহায়তা দিচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগডর লিবারম্যানের এক বিস্ফোরক মন্তব্যের পরই নেতানিয়াহুর এই স্বীকারোক্তি সামনে এলো। লিবারম্যান অভিযোগ করেছিলেন, সরকার ওই বিতর্কিত গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল যেসব গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করছে, তাদের মধ্যে ইয়াসের আবু শাবাবের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় বেদুইন উপজাতিভুক্ত একটি দল অন্যতম। ইউরোপীয় থিঙ্ক ট্যাংক ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’ (ইসিএফআর) জানিয়েছে, আবু শাবাব রাফাহ অঞ্চলে সক্রিয় একটি অপরাধী চক্রের নেতা এবং তাদের বিরুদ্ধে ত্রাণের ট্রাক লুটপাটের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান পাবলিক ব্রডকাস্টার’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যান বলেন, ‘নেতানিয়াহুর প্রত্যক্ষ নির্দেশে সরকার ‘অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত’ একদল লোককে অস্ত্র দিচ্ছে।’

লিবারম্যানের এই মন্তব্যের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, ‘লিবারম্যান কী এমন ফাঁস করলেন? নিরাপত্তা সংস্থাগুলো গাজায় হামাসবিরোধী একটি গোত্রকে সক্রিয় করেছে, এটাই তো তিনি প্রকাশ করলেন। এতে খারাপের কী আছে? এটি তো ভালো কাজ। এর মাধ্যমে ইসরায়েলি সৈন্যদের প্রাণ রক্ষা পাচ্ছে।’

তবে বিশ্লেষকরা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তেল আবিবের মোশে দায়ান সেন্টারের ফিলিস্তিনি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল মিলস্টেইন জানান, আবু শাবাব একটি বেদুইন গোষ্ঠীর অংশ, যাদের কিছু সদস্য মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেথ বা দেশটির সামরিক বাহিনী হয়তো এই মিলিশিয়া বা গ্যাংকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবছে, কিন্তু এটি বাস্তবে কোনো কার্যকরী কৌশল নয়, বরং এটি এক ধরনের ‘কল্পনা’ মাত্র।

মিলস্টেইন আরও উল্লেখ করেন, ‘আবু শাবাব গাজায় কারাভোগ করেছেন এবং সম্প্রতি তার নিজ গোত্রের নেতারাই তাকে ‘ইসরায়েলি সহযোগী ও গ্যাংস্টার’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।’ কয়েকদিন আগে হামাস তার দলের চার সদস্যকে হত্যা করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, ‘এই গ্রুপটি বিশ্বাসঘাতকতা ও চুরিকে তাদের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে।’ তারা বেসামরিক নাগরিকদের এই গোষ্ঠীর বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে গাজা শাসনকারী হামাস আরও বলেছে, ‘তাদের কাছে এই লুটেরা গ্যাং, ইসরায়েলের সহযোগী এবং শত্রু সেনাবাহিনীর মধ্যে সাহায্য লুট ও ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ বাড়ানোর জন্য মানবিক সংকট তৈরিতে স্পষ্ট সমন্বয়ের প্রমাণ রয়েছে।’

ইসরায়েল গত কয়েক মাস ধরে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রয়েছে এবং হামাসের বিরুদ্ধেও গাজায় সাহায্য সামগ্রী লুট করার অভিযোগ করে আসছে।

এদিকে, আবু শাবাবের গ্রুপটি নিজেদেরকে ‘পপুলার ফোর্সেস’ বলে দাবি করে ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, ‘তারা কখনোই ইসরায়েলের হাতিয়ার ছিল না এবং কখনো হবেও না।’