কোরবানির চামড়া নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে, অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। তিনি আরও জানান, এই নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

শেখ বশিরউদ্দিন

রোববার (৮ মে) সন্ধ্যায় লালবাগের পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার লবণসহ চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছিল, সেটিই সঠিক। বর্তমানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে, তা লবণ ছাড়া। এই দাম বিগত অনেক বছরের তুলনায় বেশি।’

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার সঠিক দাম পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যি হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা নয়। কারণ, কিছু অনভিজ্ঞ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় তা আধা পচা হয়ে যাচ্ছে। এমন চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ভালো মানের চামড়া ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

শেখ বশিরউদ্দিন আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুত করার জন্য স্থানীয়ভাবে লবণ দেওয়া এবং মজুতকরণকে উৎসাহিত করেছি। এর ফলে চামড়ার বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে এবং চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হয়েছে।’

তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন চামড়া ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। জাতীয়ভাবে একটি কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লবণযুক্ত চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন। তবে কিছু সামাজিক মাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যম ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চামড়া পচে যাওয়ার একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী ৬২০টি চামড়া এনেছিলেন, কিন্তু সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় সেগুলো আধা পচা হয়ে যায়।" এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী একজোট হয়ে চামড়ার বাজারে আবারও ধস নামানোর পরিকল্পনা করছে।’

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, "সরকার চামড়া সংরক্ষণের জন্য উদারভাবে লবণ সরবরাহ করেছে। ব্যবসায়ীদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে, সব দায় সরকারের ওপর চাপালে চলবে না। সরকার সক্ষমতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ কাজে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সঠিকভাবে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করলে উপযুক্ত, এমনকি তার চেয়েও বেশি দাম পাওয়া যাবে।"

তিনি আরও জানান, চাহিদা বাড়াতে সরকার কাঁচা ও ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ২২০ কোটি টাকার প্রণোদনা ছাড় করা হয়েছে এবং সারাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, গ্রাম ও মসজিদে লবণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখন সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এককভাবে সরকারকে দায়ী করে ভুল ও অপতথ্য ছড়িয়ে চামড়ার বাজার ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

তিনি আশ্বস্ত করেন, ‘গতকালকের চেয়ে চামড়ার দাম’বেড়েছে এবং লবণযুক্ত চামড়ার দাম আগামীকাল আরও বাড়বে। চামড়া ২-৩ মাস সংরক্ষণের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। তাই উপযুক্ত দাম না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের চামড়া ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং এতিমদের হক নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘এ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীতে রাজনৈতিক সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’

এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।