১২টি এসআরও বাতিল: কৃষি, সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন খাতের কর ছাড় প্রত্যাহার

সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়া ১২টি বিশেষ সুবিধা সম্বলিত এসআরও (স্ট্যাচুটোরি রেগুলেটরি অর্ডার) বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কৃষি, মৎস্য, সঞ্চয়পত্র এবং জ্বালানিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের কর অব্যাহতি সুবিধা বন্ধ হয়ে গেল।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোগো

এই সিদ্ধান্তের পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ এবং দেশের বাজেট ঘাটতি কমানোর চাপ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব কর ছাড়ের সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছিল, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কর ফাঁকি রোধ এবং একটি টেকসই আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এই ১২টি এসআরও বাতিলের ফলে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব আয় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, কর ফাঁকি ও অনিয়মের পথও অনেকটাই সংকুচিত হবে। এনবিআর জানিয়েছে, ভবিষ্যতে কর আদায়ে আরও কঠোর ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। তবে তারা সতর্ক করেছেন যে, কৃষি, মৎস্য ও পোলট্রি খাতের মতো সংবেদনশীল জায়গায় কর ছাড় বাতিলের প্রভাব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষকদের ওপর পড়তে পারে। তাই তাদের জন্য বিকল্প সহায়তামূলক ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এসআরও বাতিলের ফলে এখন থেকে কৃষি, পশুপালন, মৎস্য ও পোলট্রি খাত, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা, সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে আয়, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানে দানের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা আর থাকছে না।

বাতিল হওয়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এসআরও ও সেগুলোর সুবিধা

নিচে বাতিল হওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য এসআরও এবং সেগুলোর মাধ্যমে দেওয়া সুবিধা তুলে ধরা হলো:

দানশীল প্রতিষ্ঠান: বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দেওয়া দান করমুক্ত ছিল। অপব্যবহার রোধ ও সমতা আনতে এটি বাতিল করা হয়েছে।

কৃষি ও মৎস্য খাত: কৃষি, হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও হ্যাচারি খাতের আয়ের ওপর বিভিন্ন ধাপে (শূন্য থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত) কর ছাড় দেওয়া হতো। দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব ক্ষতি ও কালো টাকা সাদা করার অভিযোগে এই সুবিধাগুলো বাতিল করা হয়েছে।

সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য: সঞ্চয়পত্র ও সঞ্চয়ী আমানতের মুনাফার ওপর উৎসে করকেই চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা হতো, যা উচ্চ আয়ের করদাতাদের সুবিধা দিত। এই সুযোগ এখন বন্ধ হলো।

সম্পত্তি হস্তান্তর: সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় উৎসে করকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে ধরা হতো। এর ফলে মূলধনি আয়ের ওপর কর ফাঁকির সুযোগ ছিল, যা এখন বাতিল করা হয়েছে।

জ্বালানি খাত: প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানিতে কর অব্যাহতি দেওয়া হতো। জ্বালানি খাত থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চাল আমদানি: স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সিদ্ধ ও নন-সিদ্ধ চাল আমদানির ওপর কর অব্যাহতি বাতিল করা হয়েছে।

অপ্রদর্শিত আয়: বিশেষ করহারের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের যে সুযোগ ছিল, ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটিও বাতিল করা হয়েছে।

বলা হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকার একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ কর কাঠামো তৈরির পথে হাঁটছে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।