চাঞ্চল্যকর তথ্য: গাজার কাউকেই নিরপরাধ ভাবে না ৬৪ শতাংশ ইসরায়েলি

বুধবার (১১ জুন) প্রকাশিত একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৬৪ শতাংশ ইসরায়েলি বিশ্বাস করে যে গাজায় ‘কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি নেই’। এই মনোভাব ইসরায়েলি সমাজে চরমপন্থার উত্থানকেই নির্দেশ করে।

ম্যাপে গাজা উপত্যকার অবস্থান

হিব্রু ইউনিভার্সিটির অ্যাকর্ড সেন্টারের এই জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন জোটের ৮৭ শতাংশ সমর্থক ফিলিস্তিনি এই উপত্যকায় ‘কোনো নিরপরাধ নেই’ বলে মনে করেন।

জরিপটিতে আরও দেখা গেছে, বিরোধী নেতা আভিগদর লিবারম্যানের দল ‘ইসরায়েল বেইতেনু’ এবং জোটের বাইরের অন্যান্য ডানপন্থী দলের ৭৩ শতাংশ ভোটারেরও একই মত।

জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, মধ্যপন্থী ভোটারদের মধ্যে এই ধারণার সমর্থন ৬৭ শতাংশ এবং বামপন্থী ভোটারদের মধ্যে ৩০ শতাংশ। এর বিপরীতে, ইসরায়েলের ৯২ শতাংশ আরব নাগরিক এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন, সে বিষয়েও জরিপে জনমত যাচাই করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করে, দেশের গণমাধ্যমগুলো ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ প্রচার করছে এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে এর চেয়ে বেশি প্রতিবেদনের প্রয়োজন নেই।

ক্ষমতাসীন জোটের ভোটারদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ এই মত পোষণ করলেও বিরোধী দলের মাত্র ৪৪ শতাংশ এর সঙ্গে একমত। বরং, বিরোধীদের ৫৬ শতাংশই মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও ব্যাপক খবর প্রচারের আহ্বান জানিয়েছেন।

নির্দিষ্ট গণমাধ্যমের বিষয়ে, ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা ‘চ্যানেল ১৪’-কে নিরপেক্ষ বলে মনে করেন, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে ৫৬ শতাংশ বলেছেন চ্যানেলটি গাজাবাসীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট এবং ৫ শতাংশের মতে, এটি তাদের পক্ষে।

হারেৎজ পত্রিকার তথ্যমতে, চ্যানেল ১৪ ধারাবাহিকভাবে গাজার সব হতাহতকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে এবং একাধিকবার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বা আহত করার প্রশংসা করেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সম্পর্কে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা সিএনএন এবং বিবিসি-কে গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করেন। অন্যদিকে, আমেরিকার ডানপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত ফক্স নিউজকেও ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা একইভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করেন বলে হারেৎজ জানিয়েছে।

জরিপ অনুসারে, ৭৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, ‘ইসরায়েল সম্পর্কে বিশ্বজনমত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ’।

জরিপটি মে মাসের শেষ সপ্তাহে পরিচালিত হয় এবং এতে ১,১১২ জন ইসরায়েলির প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে বেশিরভাগ নারী ও শিশুসহ ৫৫,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজার সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ায়, ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

সূত্র: আনাদোলু এজজেন্সি