পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার: যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা চলছে, জানালেন গভর্নর

সাবেক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাচার করা অর্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য বেশ কিছু সম্পত্তি জব্দ করেছে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তাও দিচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর

আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে গত ১০ থেকে ১৩ জুন লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গভর্নর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের কারিগরি পর্যায়ে গভীর যোগাযোগ রয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরিতেও তারা আমাদের সহযোগিতা করছে।’

আহসান এইচ মনসুর জানান, বাংলাদেশ পারস্পরিক আইনি সহায়তার (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স) আওতায় যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাচারকারীদের সম্পত্তি এবং লুট হওয়া অর্থের তথ্য তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাদের কাছে নতুন নতুন অনুরোধ পাঠানো হচ্ছে।’

সাবেক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আরও সম্পত্তি যুক্তরাজ্যে জব্দ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড (প্রায় ২,৫৫০ কোটি টাকা) মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দিয়েছে। এর আগে গত মাসে বেক্সিমকো গ্রুপের শায়ান রহমান ও শরিয়ার রহমানের ৯ কোটি পাউন্ডের (প্রায় ১,৩৫০ কোটি টাকা) সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছিল।

গভর্নর আরও বলেন, ‘আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আলোচনা করছি।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাচার হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

বিনিয়োগে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান

গভর্নর একটি নতুন তথ্য দিয়ে বলেন, পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের এই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (লিটিগেশন ফার্ম) ৫ থেকে ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো মামলার আইনি খরচ বহন করে এবং সফলভাবে অর্থ উদ্ধার হলে তার একটি অংশ তারা পায়। তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া অর্থের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ তারা পাবে। তবে চূড়ান্ত পরিমাণ নির্ভর করবে কত টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে তার ওপর।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব একটি তহবিল গঠনের কথাও ভাবছে বলে জানান গভর্নর।

এর আগে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কারণে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার খোয়া গেছে।

তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ধাপে ধাপে এগোনো হবে এবং আদালতের কাছে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া, আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির সুযোগও রয়েছে, যা প্রতিটি মামলার ওপর ভিত্তি করে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।