শপথ না নিলেও মেয়র হিসেবে ইশরাককে নগর ভবনে সংবর্ধনা

শপথ গ্রহণ না করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে সংবর্ধনা পেয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ঈদের ছুটির পর আজ সোমবার ডিএসসিসি মিলনায়তনে তাকে সংবর্ধনা দেন করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। উপস্থিত কয়েকজন তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং ক্রেস্ট উপহার দেন। এ সময় মতবিনিয়ম সভার ব্যানারে ইশরাকের নামের সঙ্গে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’ কথাটি।

মতবিনিয়ম সভার ব্যানারে ইশরাকের নামের সঙ্গে লেখা ‘মাননীয় মেয়র’

ইশরাক হোসেন আজ বেলা ১১টায় নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হলে করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন বিএনপি নেতা ইশরাক। নগর ভবনে এটিই তার প্রথম সভা। সভার ব্যানারে তার নামের শেষে ‘মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন’ লেখা ছিল। সভায় ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে সম্বোধন করেন কর্মকর্তারা।

ব্যানারে ‘মেয়র’ উল্লেখ নিয়ে জানতে চাইলে ইশরাক বলেন, ডিএসসিসি কর্মীদের আয়োজনে একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। আমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করিনি। যদি কেউ আমাকে কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায় এবং তারা আমাকে ‘মেয়র’ হিসেবে সম্বোধন করে, এটি তাদের পছন্দ। এটি (মেয়র) জনগণের দাবি এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এটাকে বহাল রেখেছে।

ইশরাক আরও বলেন, এই সম্বোধন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের আরও খানিকটা শিক্ষিত হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত গেজেটে স্পষ্টভাবে আমাকে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে ইশরাকের শপথের দাবিতে আগের দিন নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছিল। এদিন ইশরাক হোসেনও ঘোষণা দেন, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, সেবাও চালু করা হবে। ডিএসসিসি থেকে জনগণের দৈনন্দিন সেবা, আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। মামলা হলেও মেয়র পদে আসীন ছিলেন তাপস।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আগের ফল বাতিল করে ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়, সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরে রিটটি খারিজ হলেও অজানা কারণে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান হয়নি। আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা না করায় ইশরাক ঘোষণা দেন, সরকার শপথ পড়াতে ব্যর্থ হলে তিনি নিজেই ঢাকাবাসীর সমর্থন নিয়ে মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন। তবে শেষপর্যন্ত শপথ না নিলেও মাননীয় মেয়র হিসেবে সংবর্ধনা পেলেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।