ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যই মানছেন না ট্রাম্প

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না—মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এমন মূল্যায়ন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার আগে তেহরান পরমাণু বোমা তৈরির ‘খুব কাছাকাছি’ চলে গিয়েছিল। এই হামলা এবং ইরানের পাল্টা হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘গোয়েন্দা পরিচালক কী বলেছেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি মনে করি, তারা (ইরান) পারমাণবিক অস্ত্র পাওয়ার খুব কাছাকাছি ছিল।’

ট্রাম্প মূলত মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। গত মার্চে গ্যাবার্ড কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০০৩ সালে স্থগিত করা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় চালুর অনুমোদন দেননি।

তিনি আরও বলেন, ‘তেহরান যদি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে গোয়েন্দা সংস্থা (আইসি) বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।’

তবে মঙ্গলবার ক্যাপিটল হিলে তুলসী গ্যাবার্ড সাংবাদিকদের বলেন, তার দেওয়া মার্চের সাক্ষ্য এবং ট্রাম্পের বক্তব্য একই ধারার। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলছেন, আমি কংগ্রেসে আমার বার্ষিক হুমকি মূল্যায়নে ঠিক একই কথা বলেছিলাম।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, গণমাধ্যমের অনেকেই আমি যা বলেছি তা মন দিয়ে পড়তে আগ্রহী নন।’

এদিকে, মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন না যে ইরান বর্তমানে পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। তাদের মতে, একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে কোনো নির্দিষ্ট দেশে মোতায়েন করতে ইরানের অন্তত দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানোর পর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা চরমে ওঠে। এর জবাবে তেহরানও পাল্টা হামলা চালায়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত ও এক হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার মতে, ইসরায়েলের এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়তে পারে। সিএনএন জানিয়েছে, হামলায় নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হলেও ফোর্ডোতে অবস্থিত সুরক্ষিত স্থাপনাটি কার্যত অক্ষত রয়েছে।