মার্কিন আশঙ্কা: ‘যুক্তরাষ্ট্র যোগ’ দিলেই হরমুজে মাইন পাতবে ইরান

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইরান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীতে মাইন স্থাপন করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে ইরান এই চরম পদক্ষেপ নিতে পারে, যা পারস্য উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে ফাঁদে ফেলার পাশাপাশি একটি বড় আঞ্চলিক সংঘাতের সূচনা করতে পারে।

হরমুজ প্রণালী

মঙ্গলবার প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পর্যালোচিত গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হলে ইরান হরমুজ প্রণালীতে মাইন স্থাপন করে পারস্য উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে আটকে ফেলার কৌশল নিতে পারে।

এই হুঁশিয়ারি একটি অস্থিতিশীল সংঘাতের পরিসর বেড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাকে আরও তীব্র করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়াশিংটন যদি ইসরায়েলি অভিযান, বিশেষ করে ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোর্ডো পারমাণবিক কেন্দ্রে সম্ভাব্য হামলায় সমর্থন দেয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানার জন্য ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র প্রস্তুত রেখেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন কমান্ডাররা সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ৪০ হাজারের বেশি সৈন্যকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে।

তেহরানও প্রকাশ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, ‘আমাদের শত্রুদের জানা উচিত যে, সামরিক হামলা চালিয়ে তারা কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারবে না এবং ইরানি জনগণের ওপর নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারবে না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়লে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দায়ী থাকবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে আরও জানিয়েছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো ইতোমধ্যেই বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা মার্কিন স্থাপনার পাল্লার মধ্যে রয়েছে, যার জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভেদ করতে ব্যর্থ হলে, বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান এবং ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ ব্যবহার করে মার্কিন হামলার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। টাইমস আরও জানায়, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ডিফেন্স প্রায়োরিটিজ’-এর রোজম্যারি কেলানিক বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু না করার সিদ্ধান্ত নিতে কখনোই দেরি হয় না।’ তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মার্কিন হস্তক্ষেপ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টায় "বহুগুণ বেশি" উৎসাহিত করবে।