ফ্রান্সে ঝড়ের তাণ্ডব: নিহত ২, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন লাখো বাড়িঘর

বুধবার রাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে এক ভয়াবহ বজ্রঝড়। ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের বেশি বেগের বাতাসে উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে লাখো বাড়িঘর এবং দেশজুড়ে ব্যাহত হয়েছে ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা।

ছবি - সংগৃহীত

ফরাসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে ঝড়টি প্যারিসে আঘাত হানে। এসময় ঘণ্টায় ১১২ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া তীব্র বাতাস ও মুষলধারে বৃষ্টিতে নগরজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে দৃষ্টিসীমা ৫০ মিটারের নিচে নেমে আসে। শহরের রাস্তাঘাট প্লাবিত হয় এবং গাছপালা উপড়ে পড়ায় জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোকে দ্রুত মাঠে নামতে হয়।

প্যারিসের দমকল বাহিনী জানিয়েছে, তারা শতাধিক ঘটনার মোকাবিলা করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৫০টি উপড়ে পড়া গাছ প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বন্যা ও ধ্বংসাবশেষ পড়ার কারণে বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়। এমনকি ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলার সময় ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ায় অধিবেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারন-এ-গারন অঞ্চলে নদীর ধারে থাকা অবস্থায় একটি গাছ উপড়ে পড়লে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, মায়েন অঞ্চলে চলন্ত কোয়াড বাইকের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় চালক নিহত হন। ফরাসি সংবাদমাধ্যম বিএফএমটিভি জানিয়েছে, ঝড়ে মোট ১৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

কর্তৃপক্ষ এই আবহাওয়াকে একটি বিরল ‘ডেরেচো’ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটি একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী বায়ুপ্রবাহ, যা প্রায় ৭০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। বিভিন্ন অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়, যা ঐতিহাসিক রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

ঝড়ের কারণে দেশব্যাপী ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। জাতীয় রেলওয়ে সংস্থা এসএনসিএফ জানিয়েছে, প্যারিস-ক্লারমন্ট এবং তুলুজ-ব্রিভসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেন চলাচল স্থগিত বা বিলম্বিত হয়েছে। রাতারাতি প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ প্রায় এক লাখ পরিবার বিদ্যুৎহীন ছিল।

নরম্যান্ডি অঞ্চলে ঝড়ের আঘাতে একটি গির্জার চূড়া ভেঙে পড়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্যারিস নগর কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের সমস্ত উদ্যান ও বাগান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। এদিকে, দেশটির শিক্ষামন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন আশ্বস্ত করেছেন, ঝড়ের কারণে যেসব শিক্ষার্থী জাতীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।