ইউএনআরডব্লিউএ: ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে

গাজায় চলমান সংকট আরও গভীর হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। গাজা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির চরম অবনতির প্রেক্ষাপটে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের একটি পোস্টে লাজারিনি বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের ফিলিস্তিন থেকে আলাদা করার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখছি।’ ইউএনআরডব্লিউএর উপদেষ্টা কমিশনে দেওয়া বক্তব্যের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লাজারিনি বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের ফিলিস্তিন থেকে আলাদা করার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখছি।’ ইউএনআরডব্লিউএর উপদেষ্টা কমিশনে দেওয়া বক্তব্যের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, গাজায় প্রায় ২০ মাস ধরে নিষ্ক্রিয়তা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে মানুষ চরম ক্ষুধা, অপমান ও মানবিক লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে। তাদের ঘেটোর মতো ঘিঞ্জি এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে, যা থেকে নতুন করে বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বুধবার উপদেষ্টা কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘অমানবিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে খাদ্য ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী পড়ে থাকলেও ২০ লাখের বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ‘গাজা মানবিক সহায়তা ফাউন্ডেশন’-এর তীব্র সমালোচনা করে লাজারিনি বলেন, ‘তথাকথিত যে ‘মানবিক সহায়তা প্রক্রিয়া’ গঠিত হয়েছে, তা আদতে জীবনবিনাশী এক ভয়াবহ ব্যবস্থা। এই প্রক্রিয়া ইসরায়েলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এবং এর আওতায় একাধিক প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে।’

লাজারিনি আরও জানান, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউএনআরডব্লিউএর প্রায় ৩২০ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে দায়িত্ব পালনকালে হত্যা করা হয় এবং পরে একটি গণকবরে তার মরদেহ পাওয়া যায়, যেখানে অন্যান্য ফিলিস্তিনি চিকিৎসাকর্মীর মরদেহও ছিল।

পশ্চিম তীরের পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে পুরোদমে দখলদারি চলছে। চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইউএনআরডব্লিউএর বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষার সুযোগ হারিয়েছে। শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করাকে তিনি কেবল অমানবিকই নয়, একটি সম্পূর্ণ বেআইনি কর্মকাণ্ড বলেও অভিহিত করেন।

লাজারিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছি, যেখানে বহুদিনের স্থায়ী শান্তির কাঠামো চিরতরে ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে।’ তিনি মন্তব্য করেন, ইউএনআরডব্লিউএর ওপর হামলা আসলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও শরণার্থীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার এক বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ।

সংস্থাটির মারাত্মক তহবিল সংকটের কথাও তুলে ধরেন তিনি। লাজারিনি জানান, অতিরিক্ত তহবিল না পেলে আগস্টের শেষ নাগাদ এমন কিছু নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে সংস্থার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে। ২০২৫ সালের জন্য সংস্থাটির ২০০ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নীতিনির্ধারকদের জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া ইউএনআরডব্লিউএ টিকে থাকতে পারবে না। এখানে শুধু একটি সংস্থার ভবিষ্যৎ নয়, বরং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সমষ্টিগত ভবিষ্যৎ বিপন্ন।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, যাতে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।