অনাহার এখন যুদ্ধের নতুন অস্ত্র: জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ

আধুনিক সশস্ত্র সংঘাতগুলোতে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে অনাহারকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং ত্রাণ সহায়তায় পদ্ধতিগতভাবে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি পার্শ্ব বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এই প্রবণতা একটি ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করছে যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ফাইল ছবি

মানবাধিকার পরিষদের ৫৯তম অধিবেশনের এই বৈঠকে বক্তারা যুদ্ধক্ষেত্রে মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা এবং দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ মানুষের কাছে নির্বিঘ্নে ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করার ওপর বিশেষভাবে জোর দেন।

জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত মাইকেল ফাখরি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখছি যে সংঘাতের সময় বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এটি সবসময়ই একটি অঞ্চলের জনগণকে নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তুচ্যুত করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কো মোত্তা ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন, বিশেষ করে গাজায়। তিনি বলেন, “গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুধুমাত্র গাজাতেই কমপক্ষে ৪৬৭ জন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। এগুলো নিছক মানবিক সংকট নয়, বরং এগুলো মানবাধিকারের সংকট, যার সরাসরি পরিণতি আজকের এই মানবিক বিপর্যয়।”

একই সুরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানবিক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক আলতাফ মুসানি স্বাস্থ্যসেবাকে নিশানা করার বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা এখন আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আজ গাজা উপত্যকায় একটিও সম্পূর্ণ কার্যকর হাসপাতাল অবশিষ্ট নেই।”

আন্তর্জাতিক মানবিক আইন বিশেষজ্ঞ মার্কো সাসোলি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।” তবে তিনি যোগ করেন, “ত্রাণকর্মীদেরও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাহিদা এবং অন্যান্য শর্তাবলিকে সম্মান করতে হবে।”

বৈঠকের শেষে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয়ের প্যাট্রিক ডুপ্ল্যাট বলেন, “ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়টি সরলরৈখিক নয়, এর ব্যপ্তি তল্লাশি চৌকি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত বিস্তৃত।” তিনি সতর্ক করে বলেন, সামরিকীকরণ করা ত্রাণ তৎপরতা ‘মানবিক নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’ এবং এটি ‘বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে’।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ইচ্ছাকৃত বাধা এবং আক্রমণ প্রমাণ করে যে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে মানবিকতাকে উপেক্ষা করে কেবল কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চলছে, যা বিশ্ব বিবেকের জন্য একটি বড় অশনিসংকেত।