পর্দার আড়ালে কী ঘটছে? ইরান-মার্কিন সংকটে মুখ খুলল তুরস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হওয়া অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। তিনি জানিয়েছেন, উভয় পক্ষই আলোচনার টেবিলে বসতে আগ্রহী এবং তুরস্ক এই সংকট নিরসনে যেকোনো ভূমিকা পালনে প্রস্তুত রয়েছে।

হাকান ফিদান

শুক্রবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠানে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। হাকান ফিদান জানান, সম্প্রতি ন্যাটো সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে একটি পূর্বপরিকল্পিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। বৈঠকে গাজা, রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইরানসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এই অঞ্চলের সমস্ত ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং বেশিরভাগ সময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্ত থাকি। কারণ, নতুন করে কোনো যুদ্ধ যেন না বাধে এবং চলমান সংঘাতের অবসান ঘটে, তা আমাদের ও এই অঞ্চলের স্বার্থেই জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, গাজায় হামলা শুরুর প্রথম সপ্তাহেই তিনি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তার মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা দেশটিকে বৈধ আত্মরক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। এই ঘটনায় এটিও স্পষ্ট হয়েছে যে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করার মতো শক্তিশালী দেশ ইসরায়েল নয়।

ফিদান উল্লেখ করেন যে, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তিনি এটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর একটি ‘সুস্পষ্ট ও গুরুতর আঘাত’ বলে স্বীকার করেন।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই সংকট নিরসনে আলোচনার পথই খোলা রয়েছে। তার বিশ্বাস, ওবামা প্রশাসনের আমলে হওয়া চুক্তির আদলে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুধু পারমাণবিক কর্মসূচির বাইরে অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করতে চায়, তবে ইরান তাতে রাজি হবে না।

মধ্যস্থতার বিষয়ে ফিদান বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যেকোনো ভূমিকা পালনের জন্য তুরস্কের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘উভয় দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, তাদের একটি মধ্যমপন্থায় আনার মতো কিছু ধারণা দেওয়া সম্ভব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইসরায়েল যেদিন ইরানে হামলা চালায়, সেদিন রাতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল যে, তারা এই হামলায় অংশ নেয়নি এবং ইরান যেন তাদের ওপর পাল্টা হামলা না করে। করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় তারা।

ন্যাটো প্রসঙ্গে হাকান ফিদান বলেন, জোটের সদস্যরা আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৫ শতাংশে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে ৩.৫ শতাংশ মূল প্রতিরক্ষা খাতে এবং বাকি ১.৫ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শিল্প সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় হবে। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, ২০২৬ সালের ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন তুরস্কে অনুষ্ঠিত হবে, তবে এটি ইস্তাম্বুল না আঙ্কারায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নেবেন।