সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস: মুখ খুললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস এবং তার ব্যাগে গুলির খালি ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনাটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই ঘটনায় ড. আসিফ মাহমুদ এটিকে ‘তথ্য সন্ত্রাস’ ও নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারির প্রমাণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘটনাটিকে ‘ভুলবশত’ ঘটেছে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন।

আসিফ মাহমুদ

সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন। সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁসের ঘটনার পর তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।

ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, রবিবারের ঘটনায় এটি স্পষ্ট যে এখন মিসাইল সঙ্গে রাখলেও কেউ নিরাপদ নয়। তিনি লেখেন, ‘যেভাবে মুহূর্তের মধ্যেই দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ কোনো এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে থাকা ব্যক্তির কাছে পৌঁছে গেল, তা রীতিমতো ভয়ংকর।’

তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এরা চাইলে অর্থ বা স্বার্থের বিনিময়ে যেকোনো দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, গুপ্তহত্যাকারী বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমাদের মতো নাগরিকদের রিয়েল-টাইম লোকেশন, সংবেদনশীল তথ্যসহ সবকিছু পাচার করে দিতে পারে।’

উপদেষ্টা হিসেবে নিজের নিরাপত্তা নিয়েই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তবে সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। এই ধরনের ‘তথ্য সন্ত্রাসীদের’ শাস্তি কী হবে, তাও জানতে চান তিনি।

আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এখন সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ‘চরিত্র হননে’ ব্যস্ত এবং কোনো বৈধ কিছু না পেয়ে উদ্ভট ও হাস্যকর বিষয় নিয়ে আক্রমণ করছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে গণ-অভ্যুত্থানের কিছু তথাকথিত অংশীজন এবং হাসিনাপুত্রের বক্তব্যে এখন আর কোনো পার্থক্য থাকছে না।’

তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে, এর পেছনে কারা দায়ী তা বুঝতে কারো বাকি থাকবে না।

অন্যদিকে, সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, তিনি একে-৪৭-এর ম্যাগাজিন নিয়ে গেছেন। এটা একে-৪৭ নয়। এটা পিস্তলের একটি খালি ম্যাগাজিন, যেটি ভুলবশত তার ব্যাগে থেকে গিয়েছিল।’

তিনি ঘটনাটিকে একটি সাধারণ ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটা আসলে এক ধরনের ভুল। অনেক সময় এমন হয়, আপনি চশমা নিতে গিয়েও সঙ্গে করে মোবাইল নিয়ে ফেলেন। উনি যদি আগে জানতেন, তাহলে কোনো অবস্থায় এটি সঙ্গে নিতেন না।’

অস্ত্রের লাইসেন্স ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বয়স ৩০ বছর না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন—এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি ওই আইনটা নিজে দেখিনি, তাই এর ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিনবার স্ক্যানিং পার হওয়ার পর ম্যাগাজিনটি শনাক্ত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই যদি নেতা হন, উনি ঢুকলে একটু প্রিভিলেজ পেতেই পারেন। কিন্তু এ ধরনের প্রিভিলেজ যেন আর না হয়—এই বার্তাটা দেওয়া হয়েছে। সবার জন্য আইন যেন সমান হয়।’

তিনি আরও জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নজরদারির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘটনাটিকে ‘ভুল’ হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেও, সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে, বিমানবন্দরে বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।