মাহফুজ আলম: ‘মব’ নয়, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা বিপ্লবী

জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনকে যারা 'মব' বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন, তাদের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা বিপ্লবী, মব নয়। তার মতে, একটি বিপ্লব ও উদ্দেশ্যহীন সহিংসতার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং এই পার্থক্য গুলিয়ে ফেলার মাধ্যমে বিপ্লবকে হেয় করার চেষ্টা চলছে।

মাহফুজ আলম

বিপ্লব বনাম 'মব': মূল পার্থক্য কোথায়?

মাহফুজ আলমের মতে, একটি বিপ্লব ও মব ভায়োলেন্সের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তিনি 'মব' এর সংজ্ঞায় বলেন, ‘বিপ্লবী উদ্দেশ্যহীন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা লালন করা সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী’ হলো মব। এর বিপরীতে, জুলাই বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার—গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি যুক্তি দেখান, আন্দোলনকারীরা যদি ‘মব’ হতো, তবে পুলিশ ও আনসারবিহীন একটি দেশকে তারা দেড় মাস ধরে সুরক্ষিত রাখতে পারত না। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরকে বাঁচিয়ে দেওয়ার ঘটনাটিও তাদের প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়ার প্রমাণ।

‘মব’ সংস্কৃতির নেপথ্যে ফ্যাসিবাদ

উপদেষ্টা তার পোস্টে স্পষ্ট করেন যে, সমাজে ‘মব’ বা বিচারবহির্ভূত সহিংসতার সংস্কৃতির উত্থানের জন্য দায়ী মূলত ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের অনুপস্থিতি। তিনি শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনকে ‘রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এক ধরনের ‘সামাজিক ফ্যাসিবাদ’ ও মব মানসিকতার জন্ম হয়েছে। তাই মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধ করতে হলে এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং একটি কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘মব’ সহিংসতা

মাহফুজ আলম বাংলাদেশে ‘মব’ সহিংসতার একটি ঐতিহাসিক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, দেশে প্রথম মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছিল বিহারি জনগোষ্ঠী। পরবর্তীতে ছাত্র, তরুণ মুক্তিযোদ্ধা এবং গত ৫৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে মব সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি আরও বৃহত্তর পরিসরে তথাকথিত ‘জনতার আদালত’, ৯৬ সালের জনতার মঞ্চ, ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এবং শাহবাগ আন্দোলনকেও ‘মব জাস্টিস’ বা ‘মব ভায়োলেন্স’ এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

ষড়যন্ত্র ও আগামীর পথ

মাহফুজ আলম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মুজিববাদী বাম এবং লীগের কালচারাল গুণ্ডারা’ জুলাই বিপ্লবকে হেয় করতে একে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে এক করে দেখানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি জুলাই বিপ্লবের পক্ষের শক্তিকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান। কোনো আইনবিরুদ্ধ বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে একই সঙ্গে ‘মুজিববাদ ও আধিপত্যবাদ’ মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন।

তার মতে, ‘আমরা কারবালা পার হইতে পারিনি, এটাই সত্য। জুলাই ও লড়াই সমার্থক।’ সামাজিক ফ্যাসিবাদ দূর করতে বিভিন্ন মতাদর্শের মধ্যে সংলাপ বা ‘ক্রস-ইডিওলজি ডায়ালগ’-এর ওপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।