ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়ে শাহের নামটাই ডুবিয়েছেন রেজা পাহলভি

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই দেশের সরকার উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র রেজা পাহলভি। কিন্তু তার সেই ডাকে সাড়া দেয়নি সাধারণ ইরানিরা। উল্টো ইসরায়েলি হামলার পর এক দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তেহরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীই ক্ষমতায় টিকে থাকে। আর এই ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন পাহলভি।

রেজা পাহলভি

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে প্যারিসে একটি টেলিভিশন সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন রেজা পাহলভি। নির্বাসিত এই ‘স্বঘোষিত রাজপুত্র’ যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় না ফেরার আহ্বান জানান। তার মতে, এমন আলোচনা তেহরানকে ‘নতুন জীবন’ দেবে।

৬৪ বছর বয়সী পাহলভি দাবি করেন, ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন আসন্ন। তিনি পরিস্থিতিকে ‘বার্লিন প্রাচীরের পতনের মুহূর্তের’ সঙ্গে তুলনা করেন। এসময় তিনি ইরানিদের রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দলত্যাগের আহ্বান জানান।

কিন্তু বাস্তবে তার আহ্বানে ইরানে সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনই গড়ে ওঠেনি। বরং ইসরায়েলি হামলার মুখে বহু ইরানি, এমনকি সরকারের সমালোচকরাও, জাতীয় ঐক্যের নিদর্শন হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষেই অবস্থান নেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসরায়েলি হামলার সময় দেশটির পক্ষ নেওয়া রেজা পাহলভির জন্য একটি মারাত্মক ভুল ছিল। তার এই অবস্থান ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতাকারীসহ অধিকাংশ ইরানিই মেনে নিতে পারেননি। বিশেষজ্ঞ ত্রিতা পার্সি বলেন, ‘আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে যখন বোমা ফেলা হচ্ছিল, তখন তিনি টেলিভিশনে গিয়ে ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি শাহের নামটাই ডুবিয়ে দিয়েছেন।’

রেজা পাহলভির প্রতি জনসমর্থনের মাত্রা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাহলভি পরিবারের প্রতি সমর্থন মূলত এক ধরনের ‘বিভ্রান্তিকর ইতিহাসবোধ’ থেকে তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভুলে গেছেন যে, ১৯২০-এর দশকে রেজা খানের নেতৃত্বে কীভাবে সংখ্যালঘু ও বিরোধীদের দমন করে একটি এক জাতিকেন্দ্রিক রাষ্ট্র তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলেও সেই দমননীতি অব্যাহত ছিল।

অনেক তরুণ ইরানি মনে করেন, পাহলভির রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিটি অবাস্তব। তিনি কেবল ইসলামি বিপ্লব-পূর্ব ইরানের একজন প্রতীক, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তার কোনো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক পরিকল্পনা নেই।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যমতে, ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে পাহলভির গ্রহণযোগ্যতা অত্যন্ত সীমিত। তার সমর্থকদের একাংশ তাকে পুরনো দিনের স্মৃতিকাতরতার প্রতীক হিসেবে দেখলেও, বর্তমান প্রজন্মের কাছে তিনি একজন কার্যকর নেতা নন। ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে রেজা পাহলভি তার অবশিষ্ট সমর্থনটুকুও হারিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।