ইসরায়েলের পরিকল্পনা: রাফাহর এক শিবিরে গাজার সব ফিলিস্তিনি!

গাজাবাসীকে একটিমাত্র শিবিরে আটকে ফেলার এক ভয়াবহ পরিকল্পনা সামনে এনেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর এই শিবির নির্মাণ করে সেখানে গাজার সমগ্র ফিলিস্তিনি জনসংখ্যাকে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। যদিও কাটজ এটিকে ‘মানবিক শহর’ বলে অভিহিত করেছেন, শীর্ষস্থানীয় আইনি বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদরা এই পরিকল্পনাকে জাতিগত নির্মূলের ষড়যন্ত্র এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের একটি ‘বাস্তব পরিকল্পনা’ বা ‘ব্লুপ্রিন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এই বিতর্কিত প্রকল্পের অধীনে, শিবিরে প্রবেশের আগে প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে ‘নিরাপত্তা যাচাই’ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। একবার প্রবেশের পর সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না এবং পুরো এলাকাটি ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রাথমিকভাবে আল-মাওয়াসি এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে এখানে আনা হবে। তবে ইসরায়েল কাটজের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, গাজার পুরো জনসংখ্যাকে এই শিবিরে আবদ্ধ করে একটি কার্যকর ‘অভিবাসন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করা, যার মূল উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বিতাড়িত করা।

ইসরায়েলের শীর্ষ মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ড এবং হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলোকাস্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আমোস গোল্ডবার্গ দুজনই এই পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। স্ফার্ডের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, “যখন আপনি কাউকে তার ভূমি থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেন, তা যুদ্ধাপরাধ। আর যখন এটি ব্যাপক আকারে ঘটে, তখন তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে পরিণত হয়।”

অন্যদিকে, গোল্ডবার্গ এটিকে একটি ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ বা ‘ট্রানজিট ক্যাম্প’ তৈরির ছক হিসেবে দেখছেন, যেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্তভাবে বিতাড়ন করা হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি স্থানে যদি কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা চলাফেরার স্বাধীনতা না থাকে, তবে তাকে কীভাবে ‘শহর’ বা ‘মানবিক’ বলা যায়?

আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজের এই ঘোষণা ইসরায়েলি সেনাপ্রধানের দপ্তরের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, আদালতে সেনাপ্রধানের দপ্তর জানিয়েছিল যে ফিলিস্তিনিদের শুধুমাত্র সুরক্ষার জন্য গাজার ভেতরেই সরানো হচ্ছে, তাদের কোথাও কেন্দ্রীভূত করার পরিকল্পনা নেই। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যেই আইনজীবী স্ফার্ড তিনজন রিজার্ভ সেনার পক্ষে আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন, যেখানে গাজার জনগণকে একত্রিত করার সামরিক নির্দেশ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

এই পরিকল্পনাটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হলো, যখন যুদ্ধবিরতির জন্য তীব্র আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন ডিসিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেতানিয়াহু নিজেও ফিলিস্তিনিদের ‘উন্নত ভবিষ্যতের’ জন্য অন্য দেশে স্থানান্তরিত করার সুযোগ তৈরির কথা বলেছেন। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনও গাজা ‘পরিষ্কার’ করার উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজার ভেতরে ও বাইরে ‘মানবিক ট্রানজিট এলাকা’ তৈরির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছিল। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের মতো অনেক ইসরায়েলি রাজনীতিকও গাজায় নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের বিষয়ে বরাবরই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আসছেন।