গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত, জিম্মি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যেই তার যুক্তরাষ্ট্র সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের মূল বিষয় ছিল গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি। তিনি বলেন, হামাসের সামরিক ও শাসনক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করাই এখন ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য।

বুধবার (৯ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তারা সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে ‘বড় বিজয়ের’ বিষয়েও আলোচনা করেছেন। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

নেতানিয়াহুর এটি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকে তার তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের অভিযান এখনও শেষ হয়নি, তবে একটি যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে আলোচনা ‘অবশ্যই চলছে।’

মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পথে অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, “চুক্তির পথে বাধা চারটি ইস্যু থেকে এখন একটিতে নেমে এসেছে।”

উইটকফ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই সপ্তাহের মধ্যেই ৬০ দিনের একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে, যার আওতায় ১০ জন জীবিত ও ৯ জন নিহত জিম্মি মুক্তি পাবে।

এর আগে কাতারের একটি প্রতিনিধি দল, যারা ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পরিচালনা করছে, হোয়াইট হাউসে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেস ভবনে স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। সব জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে এবং হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে।”

এসময় নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল চাইছে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্প্রসারণ করতে, যার আওতায় ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল।

গাজার খান ইউনুসে মঙ্গলবার রাতের এক বিমান হামলার ধ্বংসস্তূপে পড়ে থাকা একটি টেডি বিয়ারের ছবি বিশ্ববাসীকে যুদ্ধের ভয়াবহতা মনে করিয়ে দেয়। ওই হামলায় তিন নাতির মৃত্যুতে শোকে কাতর প্যালেস্টিনীয় বৃদ্ধা উম মোহাম্মদ শাবান প্রশ্ন তোলে বলেন, “সব শেষ করে এখন যুদ্ধবিরতির কথা বলছে?”

ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের এক হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এখনো গাজায় প্রায় ৫০ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৭ হাজার এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, “আমেরিকার ইতিহাসে কখনোই ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যায়নি।”

ট্রাম্প আগে থেকেই নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। এমনকি ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করে তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার সমালোচনা করেছিলেন। নেতানিয়াহু অবশ্য ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।