স্বাভাবিক সম্পর্ক নয়, ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চায় লেবানন

ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। তবে, শুক্রবার তিনি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই প্রতিবেশীর সঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আশা প্রকাশ করেছেন, যারা এখনও দক্ষিণ লেবাননের কিছু অংশ দখল করে রেখেছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। এর জবাবে জোসেফ আউনের এই বক্তব্যকেই প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জোসেফ আউন ‘শান্তি ও স্বাভাবিক সম্পর্কের’ মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেছেন। একটি আরব গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দলের সামনে তিনি বলেন, “শান্তি হলো যুদ্ধাবস্থার অনুপস্থিতি, এবং এই মুহূর্তে লেবাননে আমাদের কাছে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর স্বাভাবিক সম্পর্কের বিষয়টি বর্তমানে লেবাননের পররাষ্ট্রনীতির অংশ নয়।”

কার্যত ১৯৪৮ সাল থেকেই লেবানন ও সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। দামেস্কও সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কের আলোচনাকে ‘সময়োচিত নয়’ বলে উল্লেখ করেছে।

প্রেসিডেন্ট আউন সীমান্তের নিকটবর্তী পাঁচটি স্থান থেকে ইসরায়েলকে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন, যা তারা এখনও দখল করে রেখেছে। ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে নভেম্বরে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের দক্ষিণ লেবানন থেকে পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহারের কথা ছিল।

জোসেফ আউন আরও বলেন, লেবাননে ইসরায়েলি সৈন্যদের উপস্থিতি “আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পূর্ণাঙ্গ মোতায়েনকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, হিজবুল্লাহকে অবশ্যই ইসরায়েল সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তরে লিতানি নদীর অপর পারে তাদের যোদ্ধাদের সরিয়ে নিতে হবে। এর ফলে ওই এলাকায় লেবাননের সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরাই একমাত্র সশস্ত্র পক্ষ হিসেবে থাকবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র লেবাননকে হিজবুল্লাহকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে এবং লেবাননের কর্তৃপক্ষ এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনের দাবির বিষয়ে তাদের জবাব পাঠিয়েছে।

জবাবটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা না হলেও জোসেফ আউন বলেছেন যে, বৈরুত “দেশে অস্ত্রের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে” দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে “একদিকে বেসামরিক শান্তি এবং অন্যদিকে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রের স্বার্থ ও নিরাপত্তা স্থিতিশীলতাকে বিবেচনায় রাখা হবে।” এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, হিজবুল্লাহকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নিরস্ত্র করা হবে না।

উল্লেখ্য, লেবাননে হিজবুল্লাহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি এবং একমাত্র অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ, যারা ১৯৯০ সালে দেশের ১৫ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র রাখার অনুমতি পেয়েছিল, কারণ সেই সময়ে দক্ষিণ লেবাননের কিছু অংশ ইসরায়েলি দখলেই ছিল। সেপ্টেম্বরে দুই মাসব্যাপী যুদ্ধে পরিণত হওয়া ইসরায়েলের সঙ্গে বছরব্যাপী সংঘাতের পর লেবাননের এই দলটি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।