এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: নিজে থেকে সরেনি জ্বালানি সুইচ, তদন্তে নতুন রহস্য

আহমেদাবাদ-লন্ডন রুটের এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার এক মাস পর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুটি ইঞ্জিনের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ একসঙ্গে অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

শুক্রবার রাতে প্রকাশিত ১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, লন্ডনগামী ‘এআই ১৭১’ ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পর সর্বোচ্চ ১৮০ নট গতিতে পৌঁছেছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে উড়োজাহাজটির প্রথম ও দ্বিতীয় ইঞ্জিনের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ দুটি ‘রান’ অবস্থান থেকে সরে গিয়ে ‘কাটঅফ’ অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে বোয়িং ড্রিমলাইনারটির দুটি ইঞ্জিনেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইঞ্জিন দুটি একসঙ্গে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

তদন্তে উঠে এসেছে, উড্ডয়নের মাত্র তিন সেকেন্ডের মাথায় এই ঘটনা ঘটে, যা দুর্ঘটনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। সাধারণত, অনেক বেশি উচ্চতায় এ ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে পাইলটরা নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু উড্ডয়নের ঠিক পরপরই মাটি থেকে খুব অল্প উচ্চতায় থাকায় পাইলটদের হাতে ইঞ্জিন পুনরায় চালু করার মতো পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ ছিল না। ফ্লাইট এআই-১৭১ এর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছিল।

এই তদন্তে উড়োজাহাজটির ককপিট রেকর্ডার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাটি ছাড়ার পরপরই একজন পাইলট অন্যজনকে প্রশ্ন করেন, “জ্বালানি বন্ধ করলে কেন?” জবাবে অপর পাইলট জানান যে, তিনি এমন কিছু করেননি। তবে কে পাইলট এবং কে সহকারী পাইলট ছিলেন, অথবা দুর্ঘটনার ঠিক আগে কে জরুরি বিপদ সংকেত দিয়েছিলেন, তা প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়নি।

ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে পাইলটরা সুইচ দুটিকে পুনরায় ‘রান’ অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন। এতে প্রথম ইঞ্জিনটি সাময়িকভাবে চালু হলেও তা স্থিতিশীল হয়নি। অন্যদিকে, দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে উড়োজাহাজটিকে আর দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানো যায়নি।

যদিও এএআইবির প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্সের মন্তব্য এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ নিজে থেকে সরে যাওয়া অসম্ভব। এর নকশাই এমনভাবে করা হয়, যাতে কোনো ধরনের ঝাঁকুনি বা ধাক্কায় এর অবস্থান পরিবর্তন না হয়।” সাধারণত, উড়োজাহাজটি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর পর অথবা ইঞ্জিনে আগুন লাগার মতো জরুরি পরিস্থিতিতেই এই সুইচ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনে এমন কোনো জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ নেই।

ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর পার হওয়ার আগেই উড়োজাহাজটির উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। এরপর দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে এটি মেঘানিনগরের বিজে মেডিকেল হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজটির ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রুর মধ্যে ২৪১ জনসহ মোট ২৭০ জনের মৃত্যু হয়। বিশ্বাসকুমার রমেশ নামের এক যাত্রী এই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান।