ইরানকে আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলো পশ্চিমা বিশ্ব

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি চূড়ান্ত করতে চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিনটিকে কার্যত সময়সীমা হিসেবে ধার্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ফরাসি, জার্মানি ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার এক ফোনালাপে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম এক্সিওস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলে তেহরানের ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতিসংঘের কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় শক্তিগুলো। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির আওতায় তুলে নেওয়া সকল নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনতে তারা ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামক বিশেষ ব্যবস্থাটি কার্যকর করবে।

ফোনালাপের বিষয়ে অবগত তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘স্ন্যাপব্যাক’ কার্যকর করার কৌশল এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কূটনীতির ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করাই ছিল এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।

দুটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় দেশগুলো আগামী দিনগুলোতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। তেহরানকে এই বার্তা দেওয়া হবে যে, তারা যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বকে আশ্বস্ত করতে পারে, তবে এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা এড়ানো সম্ভব। এর জন্য ইরানকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর পরিদর্শকদের পুনরায় দেশে কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দিতে হবে।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য ইরানকে আরও একটি পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। সেটি হলো, দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে থাকা প্রায় ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলা।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত এই পারমাণবিক চুক্তিটি ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। ইরান এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র—এবং জার্মানির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ কম সমৃদ্ধি মাত্রায় ২০২.৮ কেজির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে ২০১৮ সালের ৮ মে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং তেহরানের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

সর্বশেষ, চলতি বছরের ১৩ জুন মার্কিন সমর্থনে ইসরায়েল ইরানের ওপর ১২ দিনব্যাপী এক ব্যাপক অভিযান চালায়। এই অভিযানে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও চালকবিহীন বিমান হামলা চালায়। পরবর্তীতে ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।