হামাস: ‘বন্দিমুক্তির প্রস্তাব ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে’

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, গাজায় আটক সব বন্দীকে একবারে মুক্তির বিনিময়ে দেওয়া সমঝোতা প্রস্তাব ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কোনো চুক্তি না হলে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) প্রকাশিত ২০ মিনিটের একটি ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় আবু ওবায়দা বলেন, ‘গত কয়েক মাসে হামাস একটি সমন্বিত চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল, যার আওতায় একসঙ্গে সব বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রিসভা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।’

আবু ওবায়দা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন বিষয়টি স্পষ্ট যে, অপরাধী নেতানিয়াহুর সরকার বন্দীদের বিষয়ে মোটেও আন্তরিক নয়, কারণ তারা সবাই সেনাসদস্য।’ তিনি আরও দাবি করেন, হামাস এমন একটি চুক্তি চায়, যা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথ নিশ্চিত করবে।

তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, ‘কাতারে চলমান পরোক্ষ আলোচনা থেকে ইসরায়েল সরে দাঁড়ালে হামাস আর কোনো আংশিক চুক্তিতে যাবে না। এমনকি ৬০ দিনের যে প্রস্তাবিত চুক্তির কথা চলছে, যেখানে ১০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে, সেটিও তারা মানবে না।’

হামাসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তাদের হাতে গাজায় অন্তত ৫০ জন বন্দী রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত মার্চের পর এটিই আবু ওবায়দার প্রথম ভিডিও বার্তা। এতে তিনি ঘোষণা দেন, হামাস যোদ্ধারা দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা বা আটক করতে গাজাজুড়ে অতর্কিত হামলা অব্যাহত রাখবে।

ভিডিও বার্তায় তিনি আরব ও ইসলামি বিশ্বের নেতাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ইসরায়েলের গণহত্যার মুখে আপনাদের নীরবতার কারণে লাখ লাখ নিরীহ মানুষের রক্তের দায় আপনাদের ওপর বর্তায়।’

এমন এক সময়ে এই মন্তব্যগুলো এলো, যখন দোহায় চলমান আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই স্থবির হয়ে আছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল গাজায় সামরিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন করে ‘মোরাগ করিডোর’ ও ‘মাগেন ওজ করিডোর’ নামের দুটি সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ গাজার রাফাহ ও খান ইউনিসকে বাকি ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েল রাফার ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি ‘ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয়শিবির’ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫৮ হাজার ৬৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন আহত হয়েছেন। গত মার্চে যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৭ হাজার ৮৪৩ এবং আহতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৯৩।