ব্রিটিশ চিকিৎসক: গাজায় শিশুদের শরীরে পরিকল্পিতভাবে নিশানা করা হচ্ছে

গাজায় সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে শিশুদের নিশানা করে পরিকল্পিতভাবে গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি স্নাইপাররা—এমন ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাজ্যের এক শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক। তিনি জানিয়েছেন, সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে একেক ধরনের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে গুলি চালানো হচ্ছে। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিবিসির রেডিও ৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক নিক মেইনার্ড জানান, ‘তিনি ও তার সহকর্মীরা আহত শিশুদের দেহে গুলির ক্ষতের একটি নির্দিষ্ট ধরন দেখতে পাচ্ছেন।’

বর্তমানে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত এই ব্রিটিশ চিকিৎসক বলেন, ‘একদিন দেখা যাচ্ছে সব গুলি পেটে এসে লেগেছে, পরদিন মাথায় বা গলায়, আরেকদিন হয়তো হাতে বা পায়ে। যেন এক ভয়ঙ্কর খেলা চলছে—আজ মাথায় গুলি, কাল গলায়, পরশু অণ্ডকোষে।’

তিনি আরও জানান, ‘সহিংসতার শিকার হওয়াদের বেশির ভাগই কিশোর, যারা খাদ্যের জন্য গাজা মানবিক সহায়তা সংস্থার (জিএইচএফ) বিতরণ কেন্দ্রে গিয়েছিল।’ অধ্যাপক মেইনার্ড বলেন, ‘জিএইচএফ পরিচালিত সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই কিশোরেরা নিশানা হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলো এখন যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় স্নাইপার কিংবা ড্রোন থেকে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।’

একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ১২ বছর বয়সি এক ছেলেকে অস্ত্রোপচার করছিলাম, তার বুকে গুলি লেগেছিল। অস্ত্রোপচারের টেবিলেই সে মারা যায়।’

উল্লেখ্য, জিএইচএফ কেন্দ্রগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি সমর্থনে পরিচালিত হয় এবং সেখানে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী ও ইসরায়েলি সেনারা মোতায়েন থাকে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য কেন্দ্রে খাবার নিতে আসা অন্তত ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

অধ্যাপক মেইনার্ড আরও জানান, ‘অপুষ্টির কারণে বহু রোগী অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হতে পারছে না। আমরা যেসব সেলাই বা চিকিৎসা দিচ্ছি, সেগুলো শরীরে টিকছে না। অস্ত্রোপচার করলেও সেলাই ছিঁড়ে যাচ্ছে, রোগীরা ভয়াবহ সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। আমি কখনও এত রোগীকে শুধু অপুষ্টির কারণে মারা যেতে দেখিনি।’

বিবিসি জানিয়েছে, শুধু অধ্যাপক মেইনার্ডই নন, গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্য চিকিৎসকেরাও একই ধরনের গুলির ধরন ও আহতদের বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন।