পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০০ ছুঁইছুঁই

পাকিস্তানে গত জুন মাসের শেষভাগ থেকে শুরু হওয়া বর্ষাকালীন বৃষ্টিতে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০০ জনে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) চলতি সপ্তাহে ১৯ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত নতুন করে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে।

এনডিএমএ-র সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে, ২৬ জুন থেকে বৃষ্টিজনিত বিভিন্ন ঘটনায় মোট ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯৩ জন শিশু, ৬৪ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী রয়েছেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১৪ জন মারা গেছে পাঞ্জাব প্রদেশে। এরপর খাইবার পাখতুনখোয়ায় (কেপি) ৪০ জন, সিন্ধ প্রদেশে ২১ জন এবং বেলুচিস্তানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আজাদ কাশ্মির ও ইসলামাবাদে একজন করে মারা গেছেন।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম রেডিও পাকিস্তান শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন অংশে আজ থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বর্ষার সম্ভাব্য বৃষ্টির কারণে বন্যার সতর্কতা জারি করেছে’।

এনডিএমএ জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কাবুল, সোয়াত ও পাঞ্জকোরা নদীর পাশাপাশি কালপানি ও বারা খালে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই সময়ে প্রদেশটির নওশেরা, মালাকান্দ, সোয়াত, দির এবং পার্বত্য উঁচু এলাকাগুলোতে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ইসলামাবাদ এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন শহর—রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, শিয়ালকোট, ফয়সালাবাদ, মুলতান, খানেওয়াল, সাহিওয়াল, মুজাফফরগড়, কোট আদু, তৌনসা, রাজনপুর, বাহাওয়ালপুর এবং রহিম ইয়ার খানে ভারী বৃষ্টিপাত প্রত্যাশিত’।

এনডিএমএ পাঞ্জাবের লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতানসহ অন্যান্য শহরে নগর বন্যার ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করেছে। সংস্থাটি জানায়, প্রদেশটির নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।

সিন্ধ প্রদেশের করাচি, হায়দ্রাবাদ, সুক্কুর, জ্যাকোবাবাদ, থাট্টা, বাদীন, লারকানা, জামশোরো, নওয়াবশাহ এবং মিরপুরখাস জেলাতেও বর্ষার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাতের কারণে নগর বন্যা হতে পারে এবং রাস্তা, গলি ও ভূগর্ভস্থ পথগুলোতে পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় জুন মাসের শুরুতে ভারতে এবং জুনের শেষে পাকিস্তানে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়, যা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই মৌসুমে এই অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে। কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং লক্ষ লক্ষ কৃষকের জীবিকার জন্য এই বার্ষিক বৃষ্টি অপরিহার্য। কিন্তু আবহাওয়ার ধরন ক্রমশ অনিয়মিত ও চরম আকার ধারণ করায় এই বৃষ্টিই এখন ধ্বংসাত্মক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রেকর্ড ভাঙা বর্ষার বৃষ্টি ও হিমবাহ গলে যাওয়ার সম্মিলিত প্রভাবে পাকিস্তানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তলিয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় ১,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তর গত ১৮ জুলাই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করে জানায়, ২০ জুলাই থেকে দেশটির সিন্ধ এবং উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করা মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ দেশের ওপরের ও মধ্যাঞ্চলে আরও ‘তীব্র’ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।