দর-কষাকষিতে জটিলতা! দোহা থেকে ফিরল ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল

যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাবে হামাসের জবাবের পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহা থেকে তাদের আলোচক দলকে পরামর্শের জন্য দেশে ফিরিয়ে এনেছে। এই পদক্ষেপের ফলে চলমান আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আজ সকালে হামাসের দেওয়া প্রতিক্রিয়ার আলোকে, আলোচক দলকে ইসরায়েলে অতিরিক্ত পরামর্শের জন্য ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আলোচনায় একটি সাফল্য অর্জনের জন্য আমরা মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর এবং মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফের প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি’।

তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা দেশটির সরকারি গণমাধ্যম ‘কান’-কে জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদল ফিরিয়ে আনার এই সিদ্ধান্ত আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় না। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি সব পক্ষের মধ্যে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ। কিছু নিষ্পত্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে কারণে দলটি ফিরে এসেছে। আলোচনার গতি এখনো ইতিবাচক রয়েছে’।

এর আগে বৃহস্পতিবার হামাস জানায়, তারা অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় প্রতিক্রিয়া প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে যে এটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কোনো পক্ষই এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করেনি।

তবে, দেশটির ‘চ্যানেল ১২’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলিদের হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২০০ ফিলিস্তিনি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজা থেকে আটক ২,০০০ ফিলিস্তিনির মুক্তি দাবি করেছে। জানা গেছে, মূল প্রস্তাবে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১২৫ জন বন্দী এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় গ্রেপ্তার হওয়া আরও ১,২০০ জনকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, যা ইসরায়েল গ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়।

‘ইসরায়েল হায়োম’ পত্রিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামাসের এই প্রতিক্রিয়ার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় তাদের স্থল অভিযান সম্প্রসারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পৃথকভাবে, একই গণমাধ্যমকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দোহা থেকে ইসরায়েলি আলোচক দলের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত নয়। সূত্রটি দাবি করে, ‘উল্টো, হামাস একটি সম্ভাব্য চুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে’।

তেল আবিবের হিসাব অনুযায়ী, ৫০ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জনকে গাজায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ১০,৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে, যেখানে তাদের নির্যাতন, অনাহার এবং চিকিৎসায় অবহেলার শিকার হতে হয়, যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।

গত ৬ জুলাই থেকে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তির লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছিল।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় ৫৯,৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।