‘গ্রুপিং করলেই ব্যবস্থা’: কঠোর অবস্থানে বিএনপি, আসছে নতুন কর্মসূচি

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখতে চায় না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের বড় বড় কর্মসূচির আগে প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং এখন বিএনপির মাথাব্যথার কারণ। এই বিভেদ মেটাতে এবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কড়া বার্তা পাঠাচ্ছে দলটি। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলীয় কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ না নিলে বা গ্রুপিংয়ের অভিযোগ উঠলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই কঠোর অবস্থানের সঙ্গেই প্রায় তিন মাসব্যাপী একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংগঠনিক সভায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে নির্দেশনা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কর্মসূচির লক্ষ্য ও রূপরেখা

বিএনপির পরিকল্পিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আসনভিত্তিক পদযাত্রা, বিভাগীয় সমাবেশ এবং রোডমার্চের মতো কার্যক্রম। দলটির মূল লক্ষ্য তিনটি: অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দেওয়া যথাসময়ে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের কাছে তুলে ধরা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা।

সভায় উপস্থিত বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে মতামত দেন। বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন, পদযাত্রা ও সমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে নির্বাচনমুখী করতে হবে এবং নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। একইসঙ্গে, উসকানিমূলক বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ

সভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘দলে কোনো গ্রুপিং নেই’—এই প্রত্যয় নিয়ে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আসনভিত্তিক পদযাত্রাসহ ভবিষ্যৎ কর্মসূচিগুলো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সম্মিলিতভাবে সফল করতে হবে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা পুনরায় বৈঠকে বসবেন। এরপর প্রস্তাবটি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, অর্থাৎ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে আমরা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেবো। কোনো ধরনের সংঘাতের রাজনীতি বিএনপি চায় না। ভোটের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে এবং এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই থাকব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, বিএনপি একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চায় না। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে দলটি উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করলেও সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই জনগণের স্বার্থে বিএনপি মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে।