‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নিষিদ্ধ: যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তে জাতিসংঘের গভীর উদ্বেগ

বিক্ষোভকারী গোষ্ঠী ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করার যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি এই পদক্ষেপকে সন্ত্রাস দমন আইনের এক ‘উদ্বেগজনক অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করে সতর্ক করেছেন যে, এটি দেশের মৌলিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার ঝুঁকি তৈরি করছে।

‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামক এই গোষ্ঠীর সদস্যরা গত জুন মাসে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি উড়োজাহাজে রং ছিটিয়ে দেয়াসহ সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য সরকার ‘সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০’-এর অধীনে গোষ্ঠীটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যুক্তরাজ্যের এই আইনে ‘সম্পত্তির গুরুতর ক্ষতি’ সাধনকেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ভলকার তুর্ক তার বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন আইন সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করে, যার মধ্যে ‘সম্পত্তির গুরুতর ক্ষতি’ অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কেবল সেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, যার উদ্দেশ্য মৃত্যু ঘটানো, গুরুতর শারীরিক আঘাত করা বা পণবন্দী করা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি সন্ত্রাসবাদের গুরুত্ব এবং প্রভাবকে অপব্যবহার করে এর সুস্পষ্ট সীমানার বাইরে প্রসারিত করছে।’

যুক্তরাজ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর সদস্য হওয়া, এর পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করা বা এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বোঝায় এমন পোশাক পরা একটি ফৌজদারি অপরাধে পরিণত হয়েছে। এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তুর্ক বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। এটি বহু মানুষের অধিকারকে সীমিত করছে, যারা নিজেরা কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত নন, বরং মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সংগঠনের স্বাধীনতার অধিকার চর্চা করেছেন।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ জুলাই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে অন্তত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের অনেকেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

ভলকার তুর্ক অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, এর সঙ্গে সম্পর্কিত তদন্ত বন্ধ এবং সন্ত্রাসবাদ আইন সংশোধনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি সুরক্ষিত মতপ্রকাশ এবং অন্যান্য আচরণকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে এক করে দেখছে এবং এর ফলে বহু মানুষের আইনসম্মতভাবে এই অধিকারগুলো চর্চার ক্ষেত্রে আরও প্রতিবন্ধক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’