নাহিদ ইসলাম: নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনও পাইনি

নতুন সংবিধান প্রণয়ন, বিচার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিতে কিশোরগঞ্জে সমাবেশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় শহরের পুরান থানা এলাকায় আয়োজিত এই পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান সড়ক স্টেশন রোড প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সম্পূর্ণরূপে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল, যা নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে।

সমাবেশে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনও পাইনি। বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান আদায়ের লক্ষ্যেই আমরা রাজপথে নেমেছি।’ তিনি ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন এবং নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

কিশোরগঞ্জের স্থানীয় ইস্যু তুলে ধরে সাবেক এক রাষ্ট্রপতির কড়া সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের মানুষ রাষ্ট্রপতি পেয়েছে, কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার পায়নি। এখানকার কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত এবং হাওরের শিশুরা শিক্ষার আলো পাচ্ছে না। সুপেয় পানির সংকটও তীব্র।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আপনাদের এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন।’

তরুণদের দেশের চালিকাশক্তি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থান তরুণদের নেতৃত্বেই সফল হয়েছে। এই তরুণদের কাজে লাগাতে না পারলে বাংলাদেশকে গড়া সম্ভব হবে না। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে তরুণদের জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হতে চলল, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের এখনও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি।’ তিনি দেশে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।’ এসময় তিনি ফিলিস্তিনে চলমান হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করেছি এবং নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেবো না।’ তিনি নতুন করে শুরু হওয়া চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। বাবার দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সন্তানকে প্রশ্ন তোলার মতো দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার থেকে আগত এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা রাত ৮টায় সমাবেশে যোগ দেন এবং রাত ৯টা ১০ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন। পূর্বঘোষিত এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে চাপা উত্তেজনা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে এনসিপিকে প্রতিরোধের হুমকি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সমাবেশ শেষে নেতারা নেত্রকোণার উদ্দেশে রওনা হন।