‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ কাণ্ড: মালিক লাপাত্তা, গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে তোলপাড়

হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেছে দেশের অন্যতম অনলাইন ট্রাভেল প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর ওয়েবসাইট। অভিযোগ উঠেছে, গ্রাহক ও বিভিন্ন এজেন্সির কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রশিদ পরিবারসহ দেশ ছেড়েছেন। এই ঘটনায় অগ্রিম টিকিট কেনা হাজারো গ্রাহক এবং শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সি চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রধান কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের ভিড় জমে। পাওনা টাকার নিশ্চয়তা পেতে এবং কেনা টিকিটের ভবিষ্যৎ জানতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এজেন্ট ও গ্রাহকেরা সেখানে এসে জানতে পারেন, কার্যালয় বন্ধ এবং মালিকপক্ষ অনুপস্থিত। ক্ষুব্ধ ও হতাশ ভুক্তভোগীদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।

ইউনিয়ন ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মালিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আমার ২৫-৩০ লাখ টাকা শেষ হয়ে গেল। আমি পথে বসে গেছি।’ তিনি জানান, তার এজেন্সির সব টিকিট ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কেনা হয়েছিল।

অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে জানা যায়, ফ্লাইট এক্সপার্ট সরাসরি এয়ারলাইনস থেকে টিকিট সংগ্রহ করত না। তারা দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট নিত। অভিযোগ উঠেছে, ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই মধ্যস্থতাকারী এজেন্সিগুলো এখন নিজেদের কেনা টিকিট ফেরত (রিফান্ড) দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এমডি সালমান বিন রশিদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে একটি বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তারই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা বিশ্বাসঘাতকতা করে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং পরিকল্পিতভাবে তার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। তিনি আরও লেখেন, ‘হুমকি ও অপবাদ’ থেকে বাঁচতে তিনি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

তবে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে সালমান বিন রশিদ টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ক্রেতারা টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পান। এখানে পালানোর সুযোগ নেই।’ তার পাল্টা অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ সরবরাহকারীদের টিকিট রিফান্ড করতে বলে সংকট তৈরি করেছেন।

অন্যদিকে, সাঈদ আহমেদ এই অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষই টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছে। এখন অসংখ্য এজেন্সি ও গ্রাহক কোটি কোটি টাকার টিকিট নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে।’ তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তারা মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, এমডি সালমান বিন রশিদ শনিবার কাউকে না জানিয়ে কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান।

২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইট এক্সপার্ট কম খরচে টিকিট দেওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি টিকিট ছাড়াও হোটেল বুকিং, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রসেসিং সেবা দিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছোট এজেন্সি মালিকের মতে, ‘বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভরতা আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রথম আলো অবলম্বনে