মার্কিন পাল্টা শুল্ক কার্যকর: ভারত-চীনের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হলেও মূল প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানেই থাকছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ায় ভারত, ভিয়েতনাম ও চীনের মতো দেশগুলোকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে।

বিষয়টি বোঝার জন্য একটি সাধারণ সুতির টি-শার্টের উদাহরণ দেওয়া যাক। এতদিন একটি টি-শার্টে সাড়ে ১৬ শতাংশ (২৭ সেন্ট) শুল্ক দিতে হলেও এখন নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (৩২ সেন্ট) যুক্ত হওয়ায় মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৯ সেন্ট। অর্থাৎ, প্রতিটি টি-শার্ট আমদানিতে মার্কিন ক্রেতাদের এখন প্রায় ৭২ টাকা সমপরিমাণ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

নতুন এই শুল্ক কাঠামোয় বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি চাপে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বাড়তি শুল্কের কারণে ভারতের প্রতিটি টি-শার্টে এখন মোট শুল্ক দিতে হবে ১ ডলার ২৫ সেন্ট। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ ৯৮ সেন্ট এবং চীনের জন্য প্রায় ৮২ সেন্ট (আনুমানিক ৩০% পাল্টা শুল্ক ধরে)। এর বিপরীতে বাংলাদেশের ৫৯ সেন্টের শুল্ক আমদানিকারকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়।

অন্যান্য প্রতিযোগী দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়াকেও যথাক্রমে ৯০ ও ৮৯ সেন্ট শুল্ক গুনতে হবে। একমাত্র পাকিস্তান টি-শার্ট প্রতি ৫২ সেন্ট শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে, যদিও ব্যবধান মাত্র ৭ সেন্ট।

একইসঙ্গে, একসময়ের সম্ভাব্য হুমকি মিয়ানমার (৪০% শুল্ক) ও ইথিওপিয়া (শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল) প্রতিযোগিতায় কার্যত ছিটকে পড়েছে। এমনকি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় থাকা নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসও নতুন শুল্কারোপের কারণে তাদের আগের শূন্য-শুল্কের সুবিধা হারিয়েছে।

এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাস আমাদের প্রতিযোগী নয়। ভারত ও চীনের চেয়ে আমরা এগিয়ে আছি। ৩৫ শতাংশ নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১ মিনিট) থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এর পর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী জাহাজে বোঝাই করা সব পণ্যের ক্ষেত্রেই এই নতুন হার প্রযোজ্য হবে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ একক বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৭৬০ কোটি ডলারই ছিল তৈরি পোশাক।