শরীরের সাধারণ পরিবর্তনও হতে পারে মারাত্মক রোগের ইঙ্গিত

বিখ্যাত মার্কিন অভিনেতা জেমস ভ্যান ডার বিক তার কোলন ক্যান্সারের প্রথম সতর্কতামূলক লক্ষণের কথা প্রকাশ করেছেন—যা তৎকালীন সময়ে তেমন উদ্বেগজনক বলে মনে হয়নি। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ডসন’স ক্রিক’-এর ৪৮ বছর বয়সী এই অভিনেতা ২০২৪ সালের নভেম্বরে তার কলোরেক্টাল ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার খবর জানান।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম হেলথলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কোনো সুস্পষ্ট বিপদসংকেত বা চোখে পড়ার মতো কিছু ছিল না।’

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ভ্যান ডার বিক বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্যবান ছিলাম। নিয়মিত শীতল জলে ডুব দিতাম। আমার হৃদ্‌যন্ত্রের অবস্থাও ছিল দারুণ, অথচ আমার শরীরে তৃতীয় পর্যায়ের ক্যান্সার ছিল এবং আমি কিছুই জানতাম না।’

তার শরীরে যে একটিমাত্র লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল, তা হলো মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন। অভিনেতা প্রথমে ভেবেছিলেন, এটি হয়তো তার কফি পানের প্রভাব।

ভ্যান ডার বিক বলেন, ‘ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার আগে আমি কলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। আমি এমনকি এটাও জানতাম না যে এই রোগ পরীক্ষার বয়সসীমা কমিয়ে ৪৫ বছর করা হয়েছে; আমি ভাবতাম এটা এখনো ৫০।’ অবশেষে কলোনোস্কোপি করার পর তার শরীরে তৃতীয় পর্যায়ের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়ে।

ইসরায়েলের শেবা মেডিকেল সেন্টারের দ্য সুজান লেভি-গার্টনার অনকোজেনেটিক্স ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইতান ফ্রিডম্যান নিশ্চিত করেছেন যে মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তনই কলোরেক্টাল ক্যান্সারের প্রধান বিপদসংকেত, যা নিয়ে সন্দেহ করা উচিত। তিনি ভ্যান ডার বিকের চিকিৎসা না করলেও ফক্স নিউজ ডিজিটালকে জানান, অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে রক্তশূন্যতার কারণে ক্লান্তি, মলের সঙ্গে রক্তপাত, ওজন হ্রাস, ক্ষুধামান্দ্য এবং পেটে অস্বস্তি।

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসক-বিজ্ঞানী এবং জিনোস্কোপির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. এরিকা বার্নেল উল্লেখ করেন যে ভ্যান ডার বিকের মতো কোনো ‘সুস্পষ্ট’ লক্ষণ না থাকার অভিজ্ঞতা খুবই সাধারণ। তিনি বলেন, ‘অনেক কলোরেক্টাল ক্যান্সারই নীরবে, কোনো স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই শরীরে বৃদ্ধি পায়। যখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, ততদিনে রোগটি হয়তো অনেকটাই বেড়ে যায়।’

অধ্যাপক ফ্রিডম্যান আরও যোগ করেন, ৪৫ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি, যাদের প্রথম স্তরের কোনো আত্মীয়ের কোলন ক্যান্সার বা অন্য কোনো পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার রয়েছে এবং যারা আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোন’স ডিজিজের মতো প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো ‘বিশেষভাবে উদ্বেগজনক’।

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণই মূল চাবিকাঠি

অধ্যাপক ফ্রিডম্যানের মতে, একজন সাধারণ মানুষের জীবনে কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সামগ্রিক ঝুঁকি ৪ থেকে ৫ শতাংশ। তিনি বলেন, ‘৪৫ বছর বয়স থেকে প্রতি পাঁচ থেকে দশ বছরের ব্যবধানে কলোনোস্কোপি করালে প্রাথমিক পর্যায়ে পলিপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যেগুলোর ভবিষ্যতে মারাত্মক রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি কর্কট রোগে রূপান্তরের ঝুঁকি কমানোর একটি কার্যকর উপায়।’

তবে ড. বার্নেল উল্লেখ করেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, যুক্তরাষ্ট্রে রোগ পরীক্ষার হার জাতীয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রয়ে গেছে এবং গ্রামীণ, নিম্ন-আয়ের ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলিতে এই ব্যবধান সবচেয়ে বেশি।’

এই ব্যবধান পূরণে তিনি ‘নির্ভুল ও সহজে করা যায় এমন স্ক্রিনিং প্রযুক্তির’ সহজলভ্যতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

ড. বার্নেল বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষই মলত্যাগের অভ্যাস নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না, তবে এই পরিবর্তনগুলিতে মনোযোগ দেওয়াই আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। রোগ পরীক্ষা আমাদের অসুস্থ বোধ করার আগেই সমস্যা খুঁজে বের করার সুযোগ দেয়—এবং এটিই সবকিছু বদলে দিতে পারে।’