জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ: পাকিস্তান না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না

ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হতো না, বরং এ অঞ্চলের মানুষ ভারতের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হতো। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ আয়োজিত ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা মুক্তি ও প্রথম স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষে এই প্রীতি সম্মেলন ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লবের পাশাপাশি সাতচল্লিশের স্বাধীনতাকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে ধারণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক-সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

‘আমরাই ভারতবর্ষ শাসন করতাম’

অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক বলেন, “বাঙালি মুসলমান ছিল নির্যাতিত কৃষক আর হিন্দুরা ছিল জমিদার। তাদের অত্যাচারে আমাদের পূর্বপুরুষরা জুতা পরতে পারতেন না, মাথায় ছাতা ধরতে পারতেন না। স্কুলে যেতে হতো ধুতি পরে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সেই জমিদারি ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, বঙ্গভঙ্গ রদ না হলে এই স্বাধীনতা আরও আগেই আসত এবং ভারতবর্ষ বাঙালি মুসলমানদেরই শাসন করার কথা ছিল। তার মতে, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতারা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ছিলেন, যা ছিল মুসলমানদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। তাদের কারণে আমরা ১৯৪৭ সালের আগে স্বাধীনতা পাইনি।”

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানি সেনারা না থাকলে পূর্ব বাংলার পরিণতি হায়দরাবাদের মতো হতো। তারা আমাদের দেশ পাহারা দিয়েছে এবং আমাদের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলেছে। তিনি একাত্তরের যুদ্ধের ক্ষত ভুলে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান।

‘সাতচল্লিশ, একাত্তর ও চব্বিশকে একসঙ্গে ধারণ করতে হবে’

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, “আমাদের ইতিহাস থেকে সাতচল্লিশকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সাতচল্লিশে পাকিস্তান না হলে আজ আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র পেতাম না। তাই সাতচল্লিশকে অস্বীকার করে একাত্তর ও চব্বিশকে ধারণ করা যাবে না। এই তিনটি ঘটনাকে একসঙ্গেই ধারণ করতে হবে।”

তিনি তার দাদা মুসলিম লীগ নেতা দমিরউদ্দীন প্রধান এবং বাবা মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম প্রধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি রক্ত দিয়ে অনুভব করি, আমি যদি চব্বিশ হই, তাহলে একাত্তর আমার পিতা ও সাতচল্লিশ আমার দাদা।”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “যদি সাতচল্লিশকে স্বীকার করলেই পাকিস্তানি বা রাজাকার হতে হয়—তাহলে আমি সেই গর্বিত রাজাকার।”

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, “১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—এই তিনটি অধ্যায় পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এবং একে অপরের পরিপূরক। যারা এই তিন ঐতিহাসিক অধ্যায় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তারা জাতির শত্রু।” তিনি আরও বলেন, মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ধারণ করতে না পারলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক আবুল কালাম মানিক, প্যান ইসলামিক মুভমেন্টের সভাপতি মোস্তফা জামাল ভূঞা, নাগরিক বিকাশ কেন্দ্রের (নাবিক) সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম অপু এবং উর্দুবাসী সংখ্যালঘু কাউন্সিলের মহাসচিব মোহাম্মদ আফজাল ওয়ার্সি।

এর আগে সকালে আয়োজক সংগঠনের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত তিন নেতার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।