ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী ‘লাল চিনি’ পেল জিআই স্বীকৃতি

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি ‘লাল চিনি’ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আখ থেকে তৈরি এ লালচে-বাদামি অপরিশোধিত চিনি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ‘লাল চিনিকে’ দেশের ৫৮ তম জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।

রাধাকানাই গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, এ স্বীকৃতি আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এখন লাল চিনির পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে।

স্থানীয় সাংবাদিক আবুল কালাম বলেন, ইতোমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে বিদেশে এ চিনির কদর তৈরি হয়েছে। জিআই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও সম্ভাবনা তৈরি হবে।

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ আমল থেকেই ফুলবাড়িয়ায় লাল চিনি উৎপাদন চলে আসছে। একসময় এটি কেবল অভিজাত শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত থাকলেও ধীরে ধীরে তা পুরো অঞ্চলের পরিচিত পণ্য হয়ে ওঠে।

বর্তমানে ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই, পলাশতলী, বিদ্যানন্দা, কয়েরচালা, বকতা, কুশমাইল, কলাদহ, এনায়েতপুর, রাঙামাটিয়া, সন্তোষপুর ও চৌধারাসহ বিভিন্ন গ্রামে লাল চিনি উৎপাদন হয়। শত শত কৃষক বাড়িতে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে হাতে তৈরি করেন এ পণ্য। এতে দুটি প্রধান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়—ডিঙ্গি (বড় ট্রেতে) ও ডাং/ডুপ (হাত দিয়ে)।

পলাশতলীর এনামুল হক বলেন, জিআই স্বীকৃতি আমাদের আরও সচেতন করবে উৎপাদনে। লাল চিনির পরিচয় রক্ষায় এটি বড় ভূমিকা রাখবে।

ফুলবাড়িয়া কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, চলতি মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন লাল চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

গুণমান অনুযায়ী প্রতি মণ (৪০ কেজি) লাল চিনি ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসরিন আখতার বানু বলেন, ফুলবাড়িয়া ছাড়া অন্য কোথাও লাল চিনি উৎপাদন হয় না। এটি একটি শিল্পে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সঠিক সহায়তা পেলে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবেও পরিচিতি পেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, উন্নত আখের জাত ও কৃষি উপকরণ সরবরাহে প্রদর্শনী প্লট চালু করা হয়েছে, যাতে কৃষকেরা উৎপাদনে আরও লাভবান হতে পারেন।