জার্মানির কড়া নীতি: ১০ হাজারের বেশি অভিবাসীকে ফেরত

জার্মানির সীমান্ত থেকে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি অনিয়মিত অভিবাসীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ট এই তথ্য জানিয়েছেন। নতুন রক্ষণশীল জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এই কঠোর পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলেকজান্ডার ডব্রিন্ট সাপ্তাহিক স্টার্ন ম্যাগাজিনকে জানান, কঠোর সীমান্ত ব্যবস্থা সফল হওয়ায় সরকার সেপ্টেম্বরের পরেও এই পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত ৮ মে থেকে ১০ হাজারেরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫৫০ জন আশ্রয়প্রার্থীও ছিলেন। ডব্রিন্টের মতে, সীমান্তে যে আর কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, এই বার্তা পরিষ্কার হওয়ায় আশ্রয়ের আবেদনও কমে আসছে।

ডব্রিন্ট আরও যুক্তি দেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে জার্মানির অভিবাসন নীতি সম্পর্কে ধারণা বদলে দিয়েছে। তিনি যোগ করেন, এই সাফল্য ধরে রাখতে সেপ্টেম্বরের পরেও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু রাখা হবে। তার মতে, গৃহীত সব পদক্ষেপ জাতীয় এবং ইউরোপীয় আইনের পরিধির মধ্যেই রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানি বর্তমানে প্রায় ৩৫ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এদের বেশিরভাগই ইউক্রেন, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা মানুষ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনী প্রচারণায় চ্যান্সেলর মের্ৎসের রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দল অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মে মাসে জোট সরকার গঠনের পর তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও ব্যাপক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করে, যদিও দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নেরই সদস্য।

জার্মানির এই সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ফলে, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পোল্যান্ড সরকারও গত মাসে জার্মান সীমান্তে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছে। পোল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা জার্মানির বিরুদ্ধে অভিবাসীদের পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, সদস্য রাষ্ট্রগুলো শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেই পাসপোর্ট-মুক্ত শেনজেন এলাকায় অস্থায়ী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে, যেমন জনশৃঙ্খলা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়লে। ইউরোপীয় কমিশন বারবার বলেছে, এই ধরনের পদক্ষেপ কেবল ‘শেষ উপায়’ হিসেবে এবং ‘অস্থায়ীভাবে’ ব্যবহার করা উচিত।

মের্ৎসের রক্ষণশীল শিবিরের যুক্তি হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন ও নির্দেশনা অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের প্রথমে জার্মানিতে ভ্রমণ না করে, ইইউভুক্ত প্রথম দেশেই (যেমন: গ্রিস বা ইতালি) আবেদন করা উচিত। ইইউর অভিন্ন অভিবাসন ও আশ্রয় নীতিতে গৃহীত আশ্রয়প্রার্থীদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।