ওজন ভেস্ট পরে হাঁটা: সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এই কৌশলে কি সত্যিই মেদ ঝরে?
- Details
- by জীবনশৈলী ডেস্ক
শরীরচর্চার এক নতুন উন্মাদনা আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও এই পদ্ধতির শেকড় প্রোথিত রয়েছে পরীক্ষিত সামরিক প্রশিক্ষণের কৌশলে। বিশেষজ্ঞরা এই নতুন ধারা অনুসরণ করার আগে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ‘ওয়েটেড ভেস্ট’ বা ওজন-সহ বিশেষ পোশাককে শরীরচর্চার এক ‘গোপন রহস্য’ হিসেবে প্রচার করছেন। তাদের দাবি, হাঁটা বা সাধারণ ব্যায়ামের সময় এই পোশাক পরলে ৩০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব। টিকটকে ‘#weightedvest’ লিখে অনুসন্ধান করলে যে পরিলেখগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো এ পর্যন্ত তিন কোটিরও বেশিবার দেখা হয়েছে।
তবে আটলান্টা-ভিত্তিক ক্রীড়া বিজ্ঞানী ও দীর্ঘ জীবন বিশেষজ্ঞ ড. মার্ক কোভাকসের মতে, এই ওজন ভেস্ট মোটেও নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ ও সামরিক বাহিনীতে এর ব্যবহার হয়ে আসছে, কিন্তু সামাজিক মাধ্যম এটিকে মূলধারার শরীরচর্চায় নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।’ এর জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এর আবেদন খুব সহজ। আপনি আপনার প্রতিদিনের হাঁটাচলার অভ্যাস পরিবর্তন না করেই এটিকে কিছুটা কঠিন একটি ব্যায়ামে পরিণত করতে পারেন।’
এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সৈন্যরা পিঠে ভারী বস্তা নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন, যা ‘রাকিং’ নামে পরিচিত। এর মূল উদ্দেশ্য সহনশীলতা এবং শারীরিক শক্তি বাড়ানো। একইভাবে ক্রীড়াবিদ ও দমকলকর্মীরাও দীর্ঘদিন ধরে ওজন ভেস্ট ব্যবহার করে আসছেন। মিশিগানের সনদপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক সারাহ ফুরম্যান বলেন, এই পোশাকগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং ব্যবহার করাও খুব সহজ। তার মতে, সামাজিক মাধ্যম প্রায়ই পুরোনো জিনিসকে নতুন রূপে উপস্থাপন করে।
লাস ভেগাস-ভিত্তিক গবেষক ও ‘দ্য কমফোর্ট ক্রাইসিস’ বইয়ের লেখক মাইকেল ইস্টার সম্প্রতি অ্যান্ড্রু হুবারম্যানের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, মানুষের শরীর দীর্ঘ দূরত্বে ভারী জিনিস বহন করার জন্যই তৈরি। তার মতে, রাকিং হলো এমন একটি ব্যায়াম যা হৃৎপিণ্ডের ব্যায়াম এবং শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম—উভয়েরই উপকারিতা একসঙ্গে দেয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ওজন ভেস্টের উপকারিতা পুরোপুরি বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। যদিও গবেষণায় দেখা গেছে, এটি ক্যালরি পোড়ানোর হার এবং হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ বাড়াতে পারে, তবে হাড়ের ঘনত্বের মতো দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলের বিষয়ে বিজ্ঞান এখনো কোনো স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলকায় ব্যক্তিরা ওজন ভেস্ট পরে শরীরের প্রায় ১০ শতাংশ ওজন কমালেও তাদের কোমরের হাড়ের ক্ষয় কমেনি।
অন্যদিকে, নব্বইয়ের দশকের গবেষণা এবং ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় ঋতুবন্ধ-পরবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে হাড়ের বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ মিলেছে। ড. কোভাকসের মতে, এই বয়সী নারীরাই হয়তো এই ধারা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। তবে যাদের অস্থিসন্ধি বা পিঠে সমস্যা রয়েছে, তাদের যেকোনো ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
যারা ওজন ভেস্ট পরে হাঁটা বা ব্যায়াম করতে আগ্রহী, তাদের জন্য বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। শুরুতে সবচেয়ে কম ওজন, অর্থাৎ ৫ থেকে ১০ পাউন্ড (যা শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের কম) দিয়ে শুরু করা উচিত। এমন ভেস্ট বেছে নিতে হবে যেখানে ওজন সমানভাবে বণ্টন করা থাকে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন, ১৫ থেকে ৩০ মিনিট করে এই ব্যায়াম করা যেতে পারে। ড. কোভাকস বলেন, ‘শরীরের অঙ্গবিন্যাসের দিকে মনোযোগ দিন এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান। শরীর কী বলছে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কোনো অস্বস্তি হলে থামিয়ে দিন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ওজন ভেস্ট পরে হাঁটা কখনোই ভারী ব্যায়াম বা উচ্চ গতিসম্পন্ন হৃৎপিণ্ডের ব্যায়ামের বিকল্প হতে পারে না, তবে এটি একটি ‘চমৎকার পরিপূরক’ হতে পারে। সারাহ ফুরম্যানও এ বিষয়ে একমত। তার মতে, হাড় ও পেশি সুরক্ষার জন্য সনাতনী শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়ামই সবচেয়ে প্রমাণিত পদ্ধতি। তিনি বলেন, ‘ওজন ভেস্ট আপনার হাঁটায় কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারে, কিন্তু এটি শরীরচর্চার কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নয়।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.