৩ প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন, চূড়ান্ত জুলাই সনদ যাচ্ছে দলগুলোর কাছে

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি আমলে নিয়ে অবশেষে সংশোধন করা হয়েছে ‘জুলাই সনদ-২০২৫’-এর তিনটি বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি। সনদ চূড়ান্ত করার পর বৃহস্পতিবারই (৫ সেপ্টেম্বর) এটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে।

বিশেষ করে বিএনপি সহ কয়েকটি দলের আপত্তির মুখে সনদ ও সংবিধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সনদের প্রাধান্য, সনদের ব্যাখ্যার ক্ষমতা শুধু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে থাকা এবং সনদের বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না—এই তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর তোলা আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিশ্রুতিগুলোতে সংশোধন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমন প্রস্তাব রাখা হচ্ছে যা আইনি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে টেকসই হবে।’

চূড়ান্ত সনদটি দুটি খণ্ডে বিভক্ত থাকবে। প্রথম খণ্ডে প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার মতো বিষয়গুলো থাকবে। আর দ্বিতীয় খণ্ডে দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাখা হবে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এতে অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। অধ্যাপক রীয়াজ নিশ্চিত করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সুপারিশগুলো আলাদাভাবে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। কয়েকটি দল গণসমাবেশ, গণভোট, সাংবিধানিক সংস্কার অধিবেশন বা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মতো প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

জানা গেছে, বুধবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। দলগুলোর দেওয়া বাস্তবায়ন প্রস্তাবগুলো তিনি উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কমিশন পুনরায় বৈঠকে বসে সনদ চূড়ান্ত করবে।

জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে কমিশন এরই মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে, যার মধ্যে ২৬টি দলের মতামত পাওয়া গেছে। গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। পরে সেগুলোর প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়, যা ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থার নীলনকশা হিসেবে এই সনদ প্রণয়ন করছে।

ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার জানান, এবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদই পাঠানো হচ্ছে, এরপর আর কোনো মতামত নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। সনদটি চূড়ান্ত হওয়ার পর একটি জনসভার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো এতে স্বাক্ষর করবে। এদিকে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর কমিশনের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।