গাজা সংকট নিরসনে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চাইলেন মিশরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্ণায়ক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গাজার বর্তমান বিপর্যয়কে ‘পুনর্মিলন ও পুনরুদ্ধারের সুযোগে’ পরিণত করার জন্য এই আহ্বান জানান। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশিংটন এক্সামিনার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘গাজার যুদ্ধে আমরা আজ এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এই যুদ্ধ হয় শেষ হতে পারে, অথবা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে, যার পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।’

এই শীর্ষ কূটনীতিক জানান, মিশর ও কাতারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ‘এই অঞ্চলকে আরও রক্তপাত থেকে বাঁচাতে এবং সংকট নিরাময়ের পথ প্রশস্ত করতে পারে’। আবদেলাত্তি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে। তিনি আরও যোগ করেন, ‘হামাস প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের হাতে। তাদের সিদ্ধান্তই ঠিক করবে এই সংঘাত অবসানের পথে যাবে, নাকি চলতে থাকবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রচেষ্টায় একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইউরোপে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এবং আফ্রিকায় রুয়ান্ডা ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ইউরোপে শান্তি নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি জানান। তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১৯ জানুয়ারির প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনেও তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।

মিশরীয় মন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে তার এই সকল প্রচেষ্টার মুকুটস্বরূপ, যা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি ও স্থায়ী সমাধানের পক্ষে তার অবস্থানের প্রতিফলন ঘটাবে।’

আবদেলাত্তি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রদানের জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেন। তিনি গাজায় জাতিসংঘের ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, জীবনরক্ষাকারী মানবিক সহায়তা নিয়ে হাজার হাজার ট্রাক সীমান্তে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও মিশরীয় অংশের রাফাহ সীমান্ত পারাপার পথটি সর্বদা খোলা ছিল, তবে এর ফিলিস্তিনি অংশে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ত্রাণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার গাজায় চলমান এই বর্বরোচিত আগ্রাসন ৭০০তম দিনে প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪,৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো এই আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।