তুরস্ক: ফিলিস্তিনিদের ছাড়া ফিলিস্তিন নিয়ে আলোচনা হতে পারে না

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ছাড়া ফিলিস্তিন বিষয়ক কোনো আলোচনা হতে পারে না’। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ভিসা যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।

শুক্রবার আঙ্কারায় তুর্কি প্রেস ফেডারেশনে এক সফরে গিয়ে ভিসা বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফিদান এই প্রতিক্রিয়া জানান। এই বিষয়টিকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা এ নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সব রাষ্ট্র বর্তমান বিষয়গুলো নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে। এ বছর কিছু দেশের উদ্যোগে এবং তুরস্কের সমর্থনে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন বিষয়ে একটি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘কিছু বড় পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম, যারা এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তারা স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোনোর ঘোষণা দিয়েছিল।’

ফিদান জোর দিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট আব্বাসসহ অন্যদের ভিসা বাতিলের দুটি প্রযুক্তিগত দিক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন নয় যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে পারবে না। আপনারা জানেন, সেখানে ফিলিস্তিনের একটি স্থায়ী মিশন রয়েছে। স্থায়ী প্রতিনিধি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন।’ তিনি যোগ করেন, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী এটি একটি অনিবার্য বিষয়, কিন্তু ভিসা প্রত্যাখ্যান করায় প্রেসিডেন্ট আব্বাস হয়তো উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

তিনি জানান, ভিসা বাতিলের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই সাত সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লিগের যোগাযোগ গোষ্ঠী একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তারা এই সিদ্ধান্তকে ভুল আখ্যা দিয়ে তা সংশোধনের দাবি জানায়।

ফিদান উল্লেখ করেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নির্দেশে দুটি পৃথক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি নিবিড় প্রচেষ্টা চলছে—কী ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? কী কী উপায় আছে? আমরা এই বিস্তৃত কাজটি আমাদের রাষ্ট্রপতির কাছেও উপস্থাপন করেছি।’

তিনি জানান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব, মিশর, কাতার, জর্ডান এবং ওমানের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা, বিশেষ করে, নিউইয়র্কের এই কর্মসূচি যেন ব্যাহত না হয় এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রমগুলো যেন চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই মুহূর্তে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা যেটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন, তা হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যেমন ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি মনে করে, অন্যান্য দেশের দ্বারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিতেই বৃহত্তর লাভ নিহিত রয়েছে। তাই তারা নিউইয়র্কের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।’