পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলা, আহত ২৬

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা একযোগে হামলা চালিয়েছে। শনিবারের এই ঘটনায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে অন্তত ২৬ ফিলিস্তিনি আহত এবং ১৮ জন আটক হয়েছেন। একই সময়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা কৃষিজমি ও বেদুইন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়।

বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, রামাল্লার পশ্চিমে নিলিন শহরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের সময় সংঘর্ষ শুরু হলে তিন তরুণ গুলিবিদ্ধ হন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, জেরুজালেমের উত্তর-পূর্বে আনাতা শহরে বহুসংখ্যক সেনা ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদের পর অন্তত ১৬ ফিলিস্তিনিকে আটক করে। এ ছাড়া নাবলুসের কাছে একটি ইসরায়েলি তল্লাশি চৌকি থেকে একটি ট্যাক্সি থেকে আরও দুজনকে আটক করা হয়। হেবরনেও ইসরায়েলি বাহিনী তল্লাশি চালায় এবং সড়ক অবরোধ করে। সেখানকার বাসিন্দারা সম্পত্তি নষ্ট ও হয়রানির অভিযোগ করেছেন।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিম তীরের তুবাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় তাদের চিকিৎসাকর্মীরা ১৭ জন আহত ব্যক্তিকে সেবা দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইসরায়েলি বাহিনী শহরটিতে এবং কাছের আকাবা ও তাইসির শহরে অভিযান চালালে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ফিলিস্তিনিদের ছত্রভঙ্গ করতে ইসরায়েলি বাহিনী তাজা গুলি, শব্দ বোমা ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।

এদিকে, বেদুইনদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আল-বাইদার সংস্থা জানিয়েছে, জেরুজালেমের পূর্বে আল-আরারা বেদুইন সম্প্রদায়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা দুটি কৃষি কাঠামোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া জেরিকোর উত্তরে শালাল আল-আউজা গ্রামে সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি আবাসিক এলাকায় গবাদি পশু ছেড়ে দেয়, যা সেখানকার ঘরবাড়ি ও সম্পত্তির ক্ষতি করে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, হেবরনের উত্তর-পশ্চিমে বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় আহত একটি ফিলিস্তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওয়াফা জানিয়েছে, বেশ কয়েকজন সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারী বয়স্ক ব্যক্তি সাদি আল-কাওয়াসমেহের ওপর হামলা চালায়। তিনি তখন তার স্ত্রী, সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন। হামলাকারীরা তাদের ওপর নৃশংসভাবে চড়াও হয় ও মারধর করে। তার এক ছেলের দিকে গুলিও ছোড়া হয়, তবে গুরুতর আঘাত সত্ত্বেও তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এই ঘটনায় পরিবারটিকে কিছু সময় আটকে রাখা হয়েছিল বলেও জানা যায়।

ওয়াফা আরও জানায়, মধ্য পশ্চিম তীরে রামাল্লার উত্তর-পূর্বে আল-মুগাইয়ির গ্রামের দক্ষিণ অংশে ‘ইসরায়েলি বাহিনীর ছত্রছায়ায়’ অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়। এসময় তারা এক তরুণকে মারধর করে আহত করে।

ফিলিস্তিনি সরকারের ওয়াল অ্যান্ড সেটেলমেন্ট রেজিস্ট্যান্স কমিশন জানিয়েছে, আগস্ট মাসে ইসরায়েলি বাহিনী এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরজুড়ে ফিলিস্তিনি ও তাদের সম্পত্তির ওপর ১,৬১৩টি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৪৩১টি হামলা চালিয়েছে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। কমিশন জানায়, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ‘প্রায় প্রতিদিনই’ এই ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় গণহত্যা শুরু করার পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হাতে অন্তত ১,০১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক যুগান্তকারী রায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে সমস্ত বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।